X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৩ বছরে বিএনপি

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:১৭আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:১৭

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের এ দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ৪৩ বছর অনেক বড় সময়। ঠিক কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে দলটি, তার হিসাব-নিকাশ অনেকভাবেই করা যায়। তবে রাজনীতি চর্চার রোমাঞ্চ যে সব সময় ভোগ করা যায় না, সেটা এই দলের নেতারা বহুদিন ধরেই দেখছেন।

জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি, দুটো দলই সেনানিবাসে জন্ম নেওয়া। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিভাজন অনেক। অন্যদিকে, বিএনপির নেতৃত্ব এখনও জিয়া পরিবারের হাতেই আছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি বড় দল, কিন্তু তার রাজনীতি নিজের কর্মী-সমর্থকদের কাছেই অনেকটা অজানা। চার দশক পার করা দলটির নেতাকর্মীদের কাছে দলের বর্তমান ধোঁয়াশায় ভরা এবং ভবিষ্যৎ অজানা। কারণ, রাজনীতিতে বিএনপির এখন বিশেষ কোনও ভূমিকা নেই। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের দিকটিও স্পষ্ট নয়। আদর্শগত দিক থেকে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য কতটা রাখবে আর দূরত্ব কতটা বজায় রাখবে সেই হিসাবের কোনও সুরাহা এখনও হয়নি। আঞ্চলিক রাজনীতিতে কতটা ভারত-বিদ্বেষ আর কতটা ভারতপ্রীতি হবে সেই অবস্থানও পরিষ্কার নয়। মাঠের রাজনীতিতে আন্দোলনে অসফল যেহেতু, সেহেতু চুপ করে থেকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে কিনা, সেটিও দৃশ্যমান নয়।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির বড় পরাজয় ঘটেছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর চার মাস ধরে সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে দলটির শক্ত অবস্থান ছিল। মির্জা ফখরুলকে যেতেও দেওয়া হয়নি। তবে অন্য ছয় সদস্য সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে গেলে বিএনপির শীর্ষ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনুমতি দিতে বাধ্য হন। সংরক্ষিত আসনে একজন নারী সদস্যও মনোনীত করেন। অথচ একদিন আগেই শপথ নেওয়ায় জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কারও করেছিল দলটি।

বিএনপির এই রাজনৈতিক রোমাঞ্চ চলছে সংসদে ও সংসদের বাইরে। কিন্তু কোথাও কোনও প্রভাব নেই। রাজনীতি আসলে সরলরেখায় চলে না। বিএনপির রাজনীতি কোন পথে চলবে তা বোঝা কঠিন। তবে আপাতত দলের সবার রাজনৈতিক পাঠের ভিত্তি এটুকুই যে লন্ডন থেকেই দল পরিচালিত হচ্ছে এবং হতে থাকবে। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে গিয়ে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট করেও ভোটের মাঠে সফলতা পায়নি বিএনপি। ছয় জন সদস্য নিয়েও সংসদে শপথ নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময় নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, রাজনীতির দাবার চালে হেরে গেছে বিএনপি।

রাজপথে থাকা, সমাজের মানুষকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের জন্য দাবি আদায় করা সহজ কাজ নয়। অবশ্য দলটি মানুষের দাবির খুব কাছে যেতে পেরেছে এই সময়ে সে প্রমাণও খুব একটা নেই। দলের সবকিছু পরিচালিত একটি বৃত্তে, বেগম জিয়া ও তারেক রহমান বিষয়ক জটিলতায়। এখনও দলের একমাত্র ফোকাস দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার চিকিৎসা।

বিএনপি মূলত ক্ষমতায় থেকে জন্ম নেওয়া দল। তবে অনেক দিন ধরে রাজপথে আছে। সে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এই ক্ষমতার রাজনীতি রূঢ় বাস্তব দিয়ে ঘেরা। সে রাজনীতির চর্চায় খুব কষ্ট, ঝুঁকিও বড় বেশি, বিপাকে পড়লে নির্যাতিত হওয়ার আশঙ্কাও প্রভূত। আর সেখানেই নেতৃত্বের অনীহা।

স্পষ্টতই ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি নেতৃত্ব রাজনীতির গভীরতা মাপছিলেন। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোথায় যাবেন। এই নির্বাচনে দলের যে ফলাফল হয়েছে তাতে সরকারকে একতরফা দোষ দিয়ে, আগের রাতে ভোট হয়েছে ইত্যাদি অভিযোগ করে রাজনীতির মাঠে নিজেদের খুব একটা গুরুত্ব বাড়াতে পারছিল না নেতারা। ঐক্যফ্রন্ট অকার্যকর হয়েছে নির্বাচনের পরপরই। নিজেদের দলীয় মনোবল আর চাঙা করার কোনও উপায়ই খুঁজে পায়নি গত তিন বছরে।

গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কাজ হলো দেশের মানুষের চাহিদা-আকাঙ্ক্ষাকে একটি নির্দিষ্ট দাবিতে পরিণত করে তার রূপায়ণের প্রচেষ্টা নেওয়া। সেই বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এক জটিল পরিবেশে বিএনপি। সংসদে দুর্বল, রাজপথেও শক্তিহীন। তাই বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একটা বৈরী সময় পার করছে গত ১৫টি বছর।

বিপ্লব করার আকাঙ্ক্ষা ভালো। তবে যে সংগঠনকে ভিত্তি করে বিপ্লবের পরিকল্পনা হয়, বিপ্লব ব্যর্থ হলে বেচারা সংগঠনকেই তার ঠেলা সামলাতে হয়। বিএনপির বেলায় তেমনটাই হয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফিরে কবে আসল রাজনীতি করবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় তার দলের কর্মীরা। দেশের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমে দেশ থেকে দূরে বসে সবকিছু করা যায় না। সাংবাদিক হিসেবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হলে তারা বলেন, সংকট থেকে বের হতে দলটির নেতৃত্বের প্রথম সারিতে নতুন মুখ দরকার, শুধু লন্ডন কেন্দ্রিক নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল চলে না।


লেখক: প্রধান সম্পাদক, জিটিভি

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ