X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

লাল তারকার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির দায়

লীনা পারভীন
০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৫৬আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৫৬

লীনা পারভীন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রসারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি গড়ে ওঠে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চলে নিজস্ব অর্থায়নে, যেখানে সরকারের কোনও আর্থিক সহযোগিতা সরাসরি থাকে না। সরকারের করা আইনের অধীনে একটি মঞ্জুরি কমিশন দ্বারা অনুমোদিত হয়ে থাকে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনেক আগে থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসার ঘটলেও বাংলাদেশে এই ধারণাটি খুব বেশি পুরনো নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ দ্বারা বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালনা শুরু হয়। এর আগ পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার পুরোটাই ছিল সরকারি ব্যবস্থার অধীন। তাই মানুষের আস্থা অর্জনেও চলে গেছে বেশ অনেক বছর।

যে দু’টি কারণকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু হয় সেগুলো ছিল– উচ্চশিক্ষার চাহিদার ক্রম প্রসারের তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নিতান্তই কম এবং চাহিদা ও জোগানের সামঞ্জস্য ঘটাতে যে পরিমাণ আর্থিক সংকুলানের প্রয়োজন সেটি একা সরকারের পক্ষে করা মোটেও সম্ভব ছিল না।

৯২ সালের আইনটিতে বেশ কিছু অসঙ্গতির কারণে ২০১০ সালে নতুন করে আরেকটি আইন করা হয়, যেখানে সুশাসন ও উন্নত ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। নতুন গ্রহণ করা সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম ছিল ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ড কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশেই সরকার যেকোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেবে। অর্থাৎ, এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান মঞ্জুরি কমিশন হচ্ছে ‘নির্ধারক’; যাদের ওপর সরকারি সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। এখানে মঞ্জুরি কমিশন কী কী দেখবে সে বিষয়গুলোও পরিষ্কার বলা আছে। তাহলে কী দাঁড়ালো? মঞ্জুরি কমিশন এখানে রেগুলেটরি একটি ভূমিকা পালন করে থাকে। যেকোনও সময় তারা চাইলেই যেকোনও বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে পারবে, নথি চাইতে পারবে, এমনকি সিলেবাস নির্ধারণেও থাকবে তাদের ভূমিকা। জানা গেছে, নিয়মিতভাবে ইউজিসি প্রদত্ত ফরমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তথ্যের আপডেট দিতে হয়।

অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসি’র কাছ থেকে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট নিতে হবে। এত কথা বলার একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো ইউজিসি’র এখানে সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়ে গেছে।

সম্প্রতি একটি সংবাদে পড়লাম– শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে লাল তারকা চিহ্নিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আরও পড়লাম, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমাগত শর্ত ভেঙে চলেছে তাদের লাল তারকা দেওয়া হয়েছে।

এসব পড়ে আমার প্রশ্ন হলো, এই লাল তারকাযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যক্রম শুরুই বা করলো কেমন করে এবং ক্রমাগতভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়েই বা কীভাবে গেলো?

নিয়মিত মনিটরিং থাকার পরেও কেমন করে দিনের পর দিন তারা শর্ত ভেঙেই চললো এবং শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারলো? তালিকায় এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা সবুজ তারকার র‍্যাংকিংয়ে উপরের দিকে অবস্থান করছে, আবার এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে যাদের নাকি কোনও অনুমোদনই নেই অথচ কার্যক্রম চলছে অনেক আগে থেকেই।

ইউজিসি কি তাহলে তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব ঠিকমত পালন করছে না? কেবল লাল তালিকা করে একটি সচেতনতামূলক বিবৃতি দিয়েই কি তাদের দায় শেষ হয়ে যায়? যেসব শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হলো তাদের ভবিষ্যতের দায় কে নেবে? ইউজিসি’র ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় তাদের তালিকায় মোট ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। অনুমোদন নেই বা ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে এমন তালিকায় আছে বেশ অনেক নাম। আবার মামলা চলছে এমন তালিকাও আছে।

অনুমোদনহীন বিষয়ের ওপর পড়ানো হচ্ছে এমন তালিকায় নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখে অবাকই হতে হয়। আমরা জানি নর্থ সাউথ দেশের প্রথম সারির অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সুখ্যাতি রয়েছে।

ইউজিসি’র অনুমোদন নেই এমন বিভাগে কীভাবে পড়াশোনা করানো হচ্ছে আমার জানা নেই। কোন বিভাগ অনুমোদিত আর কোন বিভাগ অনুমোদনহীন এটা একজন শিক্ষার্থী যাচাই কীভাবে করবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বুঝতে হবে- সমাজে চাহিদা আছে তার মানে এই নয় যে নিয়ম না মেনে ডিপার্টমেন্ট বাড়িয়ে যাবে।  দিনশেষে তো শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করাটাও আমাদের সবার দায়িত্ব।

আবার যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা চলছে বছরের পর বছর অথচ সেগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়াও বন্ধ করা হয়নি। এখন যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেন– তাদের কথা কেউ কি ভাবছে? নিয়মিত মনিটরিং বা রিপোর্টিংয়ে কেন প্রথমেই এসব ধরা পড়েনি?

এখানে মূল যে বিষয়টি আলোচনার সেটি হচ্ছে– দিনশেষে দায় তাহলে কার ওপর বর্তাবে? জবাবদিহির জায়গাটি কোথায়? কেবল নোটিশ দিয়ে বা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেই কি ইউজিসি তার দায়মোচন করতে পারবে? আমি জানি না ইউজিসির আইনি ক্ষমতা কতটা কিন্তু তারা আরেকটু সক্রিয় ও সচেতন বা দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক হলে হয়তো এমন অনিয়মকে গোড়াতেই আটকানো সম্ভব হতো।

লাল তারকাযুক্ত কিন্তু কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গায়ে লাগেনি, এর সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার, শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও। তার সাথে যুক্ত হয়ে যায় দেশের সুনাম ও শিক্ষা ব্যবস্থাও। ক্ষতিগ্রস্ত তো সবাই হয়। দেশের উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎকে রক্ষা করতে তাই দরকার সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ। এখানে সক্রিয়তা আসতে হবে আইন ও প্রশাসনের দিক থেকেই।

লেখক: কলামিস্ট

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ