কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় র্যাবের হাতে আটক শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহান (২০) পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শ্রী শ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় (৫০) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার হাটশ্যামগঞ্জ দক্ষিণ দেবীপুর গ্রামে। সে ওই এলাকার আব্দুল হাইয়ের পুত্র।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দীন আহম্মেদ নিশ্চিত করে বলেছেন, অধ্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটে শফিউলের নাম রয়েছে।
গত ৭ জুলাই ঈদের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের কাছে এক পুলিশ চেকপোস্টে কয়েকজন হামলাকারী বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় দুই পুলিশসহ চারজন নিহত হন। হামলার কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের অভিযানে দিনাজপুরের মাদ্রাসা ছাত্র শফিউল ইসলাম ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল ওরফে সোহান ময়মনসিংহ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) ও মঠ অধ্যক্ষ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী জানান, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে শ্রী শ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় (৫০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের হাতে আটক শফিউল জড়িত বলে নিশ্চিত করেন। চার্জশিটের ১০ নম্বর আসামি হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা মঠ অধ্যক্ষ হত্যাকাণ্ডে ১০ জন আসামির নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এরা সবাই জেএমবি সদস্য। আসামিদের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার ও ৬ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। মঠ অধ্যক্ষ হত্যার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা অপর মামলার অভিযোগেও শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহানের (২০) নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান জানান, মঠ অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় (৫০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের দেওয়া চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিট শুনানির জন্য আদালত থেকে এখনও তারিখ দেওয়া হয়নি। শুনানির পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে।
চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকাল ৬.৪৫ মিনিটে আসামি নজরুল ওরফে হাসান, রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন মোটর সাইকেলে করে মঠে আসে। নজরুল মোটর সাইকেলে বসে থাকে। রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন মোটরসাইকেল থেকে নেমে মঠের ভেতরে যায়। রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল যজ্ঞেশ্বর রায়কে চাপাতি দিয়ে কোপ মারে এবং দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে। রাজিবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন দুজনেই পিস্তল দিয়ে গুলি করে। ককটেল ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে করে আবার চলে যায়।
আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব ওরফে আন্ধিকে (২৬) এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে রংপুর বিভাগের জেএমবির কমান্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল অস্ত্র বহনকারী ও হেফাজতকারী। নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসানকে বলা হয়েছে অস্ত্রবহনকারী, পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী ও বাইকচালক। আলমগীর হোসেন পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্র হেফাজনকারী। মো. রমজান আলী সাংগঠনিক কাজ পরিচালনাকারী ও পরিকল্পনাকারী, মো. হারেজ আলী অস্ত্র নিরাপদ হেফাজতকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহযোগী, খলিলুর রহমান জেএমবির সদস্য সহযোগী, মো. রানা আসামিদের বাসস্থান দেওয়া ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের অদূরে শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীদের বোমা বিস্ফোরণ ও চাপাতির আঘাতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। আহত হন প্রায় ১৫ জন। তাদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ঝর্ণা ভৌমিক নামে এক নারী ও হামলাকারী আবির নিহত হন।
/এফএস/টিএন/
আরও পড়ুন:
ফেসবুকে এখনও নিয়ন্ত্রণহীন সব ‘জিহাদি পেজ’
সংবাদমাধ্যম আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে ব্যবহার করেছে: জাকির নায়েক
নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন, স্বামীসহ গ্রেফতার
প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
হলি আর্টিজান থেকে উদ্ধার হওয়া সবাই নজরদারিতে