ফেসবুকে এখনও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে ধর্মকে ব্যবহার করে নানান রকম পেজ। এখানে জিহাদি পোস্ট থেকে শুরু করে ‘দ্বীনের দাওয়াত’ দেওয়া চলছে নির্বিঘ্নে। কখনও সরাসরি, কখনও বা জাকির নায়েকের নানান ভিডিও দিয়ে জিহাদের ডাক দেওয়া হচ্ছে।
‘মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া’, ‘সেপারেটলি সেকিং ইসলাম’, ‘সালাউদ্দিনের ঘোড়া’র মতো পেজগুলো বন্ধ করা হলেও মুহূর্তের মধ্যে আরেকটি পেজ খুলে ফেলা হচ্ছে। ফেসবুকে ‘ডেসপারেটলি সেকিং ইসলাম’ নামেই পাঁচটির বেশি পেজ পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব পেজ বন্ধ করা সমাধান নয়। দেশে বসেই এরা এসব কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে, সেটাই তাদের সার্টিফিকেট। এদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করলে প্রচারণার হার কমে যেতো এবং কম মানুষের দৃষ্টিসীমায় আসতো।
আর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কাজটি এত সহজ নয়! মৌলবাদ ও প্রগতিশীলতা কখনও একসঙ্গে চলতে পারে না এবং এই কার্যক্রম দেশের ভেতরে বসেই পরিচালিত হচ্ছে।
‘ডেসপারেটলি সেকিং ইসলাম’ পেজগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জাকির নায়েকের নানা পোস্ট দেওয়া আছে। একটি পোস্টে বলা হয়, ‘হিন্দু কোনও ধর্ম নয় বললেন ডা. জাকির নায়েক। হিন্দু-মুসলিম ভাইয়েরা সবাই দেখতে পারেন এই ভিডিওটি। দাওয়াতি কাজের উদ্দেশ্যে ভিডিওটি শেয়ার করবেন।’
আরেকটি পোস্টে জিহাদ কেন দরকার বলতে গিয়ে কোরআনের আয়াত তুলে ধরে বলা হয়, ‘বন্ধুরা আমার, আজ মুসলিম জাতির এ করুণ পরিস্থিতির প্রতি দৃষ্টিপাতকারী যে কোনও মানুষ অতি সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, মুসলমানদের এ দুরাবস্থার মূল হচ্ছে, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া, যা হাদিসের ভাষায় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। পথভ্রষ্ট জালিম শাসকরা আজ ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে বসে আছে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, প্রচারণা থামানো যাচ্ছে না। কারণ, ইসলামভীতির কারণে শক্ত অবস্থান নিতে পারিনি। তারা সেই সুযোগ এখনও ব্যবহার করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিপরীতে শক্ত অবস্থান না নেওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আপনি যদি সেক্যুলার হন, তাহলে ইসলামিক হতে পারেন না। এই দ্বন্দ্বেরই সুযোগ নিচ্ছে প্রচারকরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের বিশেষ টিম এগুলোতে বরাবরই নজরদারি করে। যখনই যেটা জানা যায়, সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরামের সংগঠক রায়হান রশীদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একদিকে যেমন ইতিবাচক, আরেকদিকে তেমনি জঙ্গিবাদের প্রসার, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অপপ্রচার কিংবা অপরাধের উস্কানি দ্রুত বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াতেও জুড়ি নেই। সরকারের উচিত এ বিষয়ে ফেসবুক-টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিরিয়াসলি আলোচনার সূত্রপাত করা।
এই প্ল্যাটফর্মগুলো যখন কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের হাতিয়ার হয়ে ওঠে এবং বাকিদের নিরাপত্তা বিপন্ন করে তোলে, তখন মালিক হিসেবে কর্তৃপক্ষের দায় অবশ্যই আছে। কারণ, ফেসবুক-টুইটার কোনও দাতব্য সংস্থা নয়। তারা এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করে।
/এবি/ আপ -এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
ভারতে না ফিরে আফ্রিকার পথে জাকির নায়েক!
শর্ত ভঙ্গ করে বাংলাদেশে অনুষ্ঠান বানিয়ে রফতানি করেছে পিস টিভি
অনলাইনেও পিস টিভি বন্ধের উদ্যোগ