কুষ্টিয়ায় চলতি বছর পাটের ফলন হ্রাস পাওয়ার পরও দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বর্তমান বাজার মূল্যে পাট বিক্রি করে খরচ না উঠায় কৃষকদের স্বপ্ন ম্লান হতে চলেছে। সরকার পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিলেও, পাটের দাম কম পাওয়ায় চাষিরা হতাশ।
এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। তবে শুরুতেই দাম নিয়ে চাষিরা হতাশ। বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ টাকায়। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩শ’ টাকা কম।
জেলা পাট অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছরে কুষ্টিয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৯শ’ ৩৭ একর। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৪৪০ একর, মিরপুর উপজেলায় ২১ হাজার ৭৪০ একর, ভেড়ামারা উপজেলায় ১০ হাজার ৮৭০ একর, দৌলতপুর উপজেলায় ৪১ হাজার ৯৯৫ একর, কুমারখালী উপজেলায় ১৩ হাজার ৩৪০ একর এবং খোকসা উপজেলায় ৯ হাজার ৩৯০ একর জমিতে। এ বছর পাট উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৭ বেল।
দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের পাট চাষি বাবুল হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে একদিকে যেমন পাটের গোড়ায় শিকড় গজিয়েছে। অন্যদিকে দেরিতে পাট বোনার ফলে পাটগাছ বাড়তে পারেনি। এ কারণে পাটের উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে। অন্য বছর বিঘা প্রতি ১০/১২ মণ পাট পাওয়া যায় কিন্তু এবার বিঘা প্রতি পেয়েছি মাত্র ৬ মণ পাট। বর্তমানে এই এলাকার হাঁট-বাজারে এক মণ পাটের সর্বোচ্চ মূল্য ১১শ’ টাকা। আবার অনেক পাট কালো হাওয়ায় স্থানীয় ব্যাপারিরা দামই বলছেন না।
মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের পাট চাষি বদর উদ্দিন বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করে যে খরচ করেছি বর্তমান বাজার মূল্যে পাট বিক্রয় করে সে খরচই উঠছে না। পাটের দাম না বাড়লে আগামীতে পাট চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
একই এলাকার পাট চাষি আব্দুর রশিদ বলেন,‘গত বছর পাটের দাম ভালো থাকায় এ বছর বেশি জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। কিন্তু পাট কেটে ঘরে তোলার খরচ ও বিক্রি সমান-সমান। জমি তৈরি, সেচ, সার, কীটনাশক ও নিজের পরিশ্রম পুরোটাই ঘাটতি।
মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের পাটচাষি রাকিবুল ইসলাম জানান, এবার অতিবৃষ্টির কারণে পাটগাছের গোড়ায় পানি জমে থাকায় একদিকে যেমন পাট কাটতে সমস্যা হয়েছে, তেমনি কোথাও কোথাও ক্ষেতের পাশে জাগ দেওয়ার মতো যথেষ্ট পানি না থাকায় দূরে নিয়ে জাগ দিতে হয়েছে। যে কারণে বেশি শ্রমিক লেগেছে ও খরচ বেশি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে এক হাজার টাকা, বীজে ৬শ’ টাকা, নিড়ানিতে দুই হাজার টাকা, সেচে চার হাজার টাকা এবং সারে এক হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়াও পরিবহন খরচ তো রয়েছে। এ কারণে বর্তমান বাজারে পাট বিক্রি করে কৃষকের কোনও লাভ হচ্ছে না।
বর্তমানে বাজারে পাটের মূল্যে গত বছরের চেয়ে কমের কথা শিকার করে কুষ্টিয়ার মূখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘পাটের দাম বৃদ্ধির জন্য এবং পাটের ব্যাবহার বাড়ানোর জন্য সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এরমধ্যে ‘পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিতে ২০১০ সালের আইনের আওতায় ধান-চালসহ মোট ১৭টি পণ্যে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে পাট বিক্রি করতে পারেন এজন্য সরকার কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় একটি পাট বিক্রয় কেন্দ্র (বিজেএমসি) স্থাপন করেছে। এরইমধ্যে সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা শুরু হয়েছে। এখানে তিনটি গ্রেডে পাট কেনা হচ্ছে। যার মধ্যে এসএমআর গ্রেডের পাট ১৬৮০, ক্সস গ্রেডের পাট ১৭৩০ এবং সি গ্রেডের পাট ১৭৮০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে বিজেএমসি পাট বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হলে ওই এলাকার পাট চাষিরা লাভবান হবেন।