X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন বার বদলির আদেশেও শিবালয় ছাড়েননি ইউএনও রাসেদ

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২১:২৯আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:৩২

ইউএনও কামাল মোহাম্মদ রাসেদ সাত মাসে তিনবার বদলির আদেশ, সবশেষে এ মাসের শুরুর দিকে সতর্কীকরণ। যাতে বলা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বর্তমান কর্মস্থলে না ছাড়লে তা স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবে। এরপরও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল মোহাম্মদ রাসেদকে সরাতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, ইউএনও রাসেদের এই শিবালয়প্রীতির পেছনে রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। উপজেলার চরাঞ্চলে গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে; অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। প্রশাসনের নাকের ডগায় পদ্মা ও যমুনায় অবাধে চলছে অবৈধ বালু ব্যবসাও। এছাড়া, ইউএনও রাসেদ একইসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সবগুলো বিষয়েই নির্বাহী কর্মকর্তার বিপুল অর্থযোগ দেখছে স্থানীয় সচেতন মহল।

প্রথম বদলির আদেশ ইউএনওর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৃথকভাবে চিঠিও দিয়েছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সূত্রমতে, প্রভাবশালী এক আত্মীয়ের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বারবার অগ্রাহ্য করছেন ইউএনও রাসেদ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইউএনও কামাল মোহাম্মদ রাসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বদলির আদেশ হয়েছে আর যাচ্ছি না কেন–এটা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আমি এর বাইরে কিছু বলতে রাজি নই।’

এ বিষয়ে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পোস্টিং অ্যান্ড ডেপুটেশন’ (এপিডি) শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘আমরা তাদের আদেশ করেছি। যদি তারা নির্ধারিত সময়ে না যান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো।’

পদোন্নতিসহ বদলির আদেশ ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট শিবালয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন কামাল মোহাম্মদ রাসেদ। একটি সূত্র জানায়, যোগদানের ১১ মাসের মাথায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের মাঠপ্রশাসন শাখার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ মুনির হোসেন ২০১৭ সালের ২ জুলাই কামাল মোহাম্মদ রাসেদকে বদলি করেন রাজবাড়ীর কালুখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে। ওই সময় তিনি তদবির করে বদলির আদেশ স্থগিত করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে কামাল মোহাম্মদ রাসেদকে মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক করা হয়। ওই সময়ও তিনি তদবির করে এই আদেশ স্থগিত করান।

পদোন্নতিসহ দ্বিতীয় বদলির আদেশ পরে ৪৫ দিনের মাথায় এ ব্ছরের ৩১ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে বদলির আদেশ জারি করে। তারপরও শিবালয়েই আগের পদে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন ইউএনও রাসেদ।

সতর্কীকরণ নোটিশ এরপর গত ৮ ফ্রেব্রুয়ারি তিনি নতুন কর্মস্থলে কেন যোগদান করেননি তা জানতে চেয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সতর্কতামূলক ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্নের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান না করলে তা স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবে।’ তারপরও শিবালয় ছাড়েননি ইউএনও রাসেদ।

শিবালয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবর  বলেন, ‘ইতোপূর্বে ইউএনও রাসেদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও এসেছে।’

শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ইউএনওর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যানসহ আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু বদলির আদেশ জারি হলেও তিনি কোন খুঁটির জোরে এখনও এখানে আছেন, এটা বোধগম্য নয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ সহকারীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ইউএনও রাসেদ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

রেজাউর রহমান খান আরও বলেন, ‘শিবালয় উপজেলার চরাঞ্চলে কয়েক কোটি টাকার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজের শুরুর দিকে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, শিবালয় উপজেলায় ৩০০ একর জমির ওপর একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে। সেই জমি অধিগ্রহণের সময় অনৈতিক লেনদেন হতে পারে। এছাড়া, পদ্মা-যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু ব্যবসার মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্যও রয়েছে। শিবালয় উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় ভূমি সংক্রান্ত খারিজের কাজও করছেন ইউএনও রাসেদ। এক্ষেত্রেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ইউএনও টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মেটাতে মধ্যস্থ্যতাকারী হিসেবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’

কয়েক দফা বদলির আদেশের পরও নতুন কর্মস্থলে যাচ্ছেন না এই প্রশ্ন করলে শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল মোহাম্মদ রাসেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বদলির আদেশ হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষই আমাকে রেখেছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষই ভালো জানে।’

 

/এফএস/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ