গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে বিরোধ ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও একটি হত্যাকাণ্ডের জের ধরেও বিরোধিতা ছিল। এসবের জের ধরে পরিকল্পনা করে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশকে। পুলিশের তদন্ত এবং আদালতে তিনজনের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের এই তথ্যই বের হয়ে এসেছে।
নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেদী হাসান গত বুধবার জানান, একটি মোবাইল ম্যাসেজের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। নিহত পলাশের বড় ভাই সাইফুর রহমান হিলুর দায়ের করা মামলায় ১৫ আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান মনি, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান মাসুদ, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমানও রয়েছেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজন হলেন লোহাগড়ার পশ্চিম কুমড়িপাড়ার সৈয়দ আল আমিন (২৭), শান্ত শেখ (২২), রোমান আলী (২২) এবং গোপীনাথপুরের গোলাম কিবরিয়া (২৩)। এ চারজন এজাহারভুক্ত আসামি নন। তবে মোবাইল মেসেজের সূত্র ধরে পলাশ হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা বেরিয়ে এসেছে। লোহাগড়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নয়ন বড়ালের আদালতে আল আমিন, গোলাম কিবরিয়া ও রোমান ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পলাশ হত্যার কথা স্বীকার করেন।
রোমান আলী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দিতে বলেন, ‘গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব ছিল। এ কারণে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কিবরিয়ার বাসায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করি। হত্যার সময় তাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করি।’
আল আমিন বলেন, ‘পলাশ চেয়ারম্যান তিন বছর আগে আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি। বাবা হত্যার প্রতিশোধ নিতে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছি।’
গোলাম কিবরিয়া তার জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘পলাশকে হত্যার জন্য আল আমিন ও শান্ত আমাকে টাকার প্রলোভন দেখায়। চাকরি নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে টাকার লোভে হত্যাকাণ্ডে অংশ নিই।’
এ ব্যাপারে মামলার বাদী জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুর রহমান হিলু বলেন, ‘এজাহারভুক্ত সব আসামিকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তারা বিভিন্ন সময় আমাদের হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া ছয় মাস অতিবাহিত হলেও চার্জশিট দেওয়া হয়নি।’
মামলার আসামি আওয়ামী লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমান বলেন, ‘বাদীপক্ষকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কেবল হয়রানি করার জন্য ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।’ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত খুনিদের নামে চার্জশিট দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাদীপক্ষকে হুমকির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পলাশ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম) বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পলাশের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে আসা একটি ম্যাসেজের সূত্র ধরে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত তিনজন পলাশ হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে পলাশকে হত্যা করা হয়। তার শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। নিহত পলাশ কুমড়ী গ্রামের গোলাম রসুল ওরফে নোয়াইয়ের ছেলে।
আরও পড়ুন- প্রতিপক্ষই চেয়ারম্যান পলাশকে হত্যা করেছে, দাবি স্বজনদের