বাগেরহাটে গ্রাহকদের চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা আলোচিত প্রতিষ্ঠান নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও তার কর্ণধার (এমডি) বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাবেক পিয়ন (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর তদন্তের শুরুতেই সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি দল বাগেরহাট শহরের মিঠাপুকুর পাড় এলাকায় অবস্থিত নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে যায়। সেখান থেকে গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহের ফরম, চুক্তি নামা, গ্রাহকদের তথ্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্যসহ প্রয়োজীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে।
দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাওন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অভিযোগ আকারে বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং পাঠিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আমার নেতৃত্বে খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি দল তদন্ত শুরু করেছে। অনুসন্ধানের শুরুতেই সন্দেহ জনক অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড গ্রাহকদের মাসে প্রতি লাখে ২ হাজার টাকা করে মুনাফা দিতো। চার বছরে জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ দেওয়াসহ নানা লোভনীয় অফারে সাধারণ মানুষ জমিজমা বিক্রি করেও এখানে আমানত রেখেছেন। এছাড়া গত কয়েক বছর নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি অনুমোদন নিয়ে সেখানেও আমানত সংগ্রহ করেছে। এভাব অবৈধ উপায়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আবদুল মান্নান তালুকদার ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই টাকা দিয়ে নিজের ও পরিবারের নামে জমি কিনেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে আবদুল মান্নান তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনের কাছে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠানের সম্পদের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা। আর তিনি মাত্র ১৫/২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এরপর থেকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে।
অপর দিকে সমবায় অধিদফতরের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির আমানতকারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গত ৩১ জানুয়ারি বাগেরহাট শহরের হাড়িখালী এলাকার বালুর মাঠে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গ্রাহক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সকালে কয়েক হাজার গ্রাহক উপস্থিত হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সেই সমাবেশ করতে দেয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।
আরও পড়ুন-
'আমি ১৫-২০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক, তাও দান করার ফলে কমে গেছে'
সাবেক পিয়ন চার হাজার কোটি টাকার মালিক!
টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে বাগেরহাটের সেই সাবেক পিয়নের বিরুদ্ধে!