নাটোর সদর উপজেলার হালসা এলাকায় জুনিয়রকে অপমান করার জেরে খুন হয়েছেন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। লাশ উদ্ধারের পাঁচ দিন পর ওই হত্যা রহস্য সমাধান করেছে পুলিশ। নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও (আইও) উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার সংবাদ সম্মেলনে মামলার আইও এসআই সামসুজ্জোহা জানান, গত রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার হালসার নবীনকৃষ্ণপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে ও নাটোরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আরএসটিইউ) বিবিএ শিক্ষার্থী কামরুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও বাম চোখ উপড়ে ফেলার চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় নিহতের বোন রেহেনা বেগম বাদী হয়ে সন্দেহভাজন পাঁচ জনের নামসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, মামলার সূত্র ধরে জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা দল হত্যা রহস্য উদঘাটন ও খুনিকে গ্রেফতারে মাঠে নামে। পরে মূল আসামি সুলতানপুর এলাকার নূরুল হকের ছেলে ও নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি অনার্স কলেজ শিক্ষার্থী মিনহাজ হোসেনকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। সে জানায়, সে তার মামার বাড়ি থেকে পড়ালেখা করে। অবসরে গ্রামের মোড়ে ক্যারামে জুয়া খেলে। মাহবুব নামে একজন তার খেলার টাকা দিতো। কিন্তু মাহবুবের সঙ্গে কামরুলের বন্ধুত্ব থাকায় সে মাহবুবকে টাকা দিতে নিষেধ করতো আর তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো। এতে কামরুলের ওপর তার রাগ হলেও সিনিয়র মানায় কিছু বলতো না।
মিনহাজের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, সম্প্রতি হালসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যাওয়ার জন্য মিনহাজ ভ্যানে ওঠে। কিছুক্ষণপর ওই ভ্যানে এসে কামরুল তাকে নামিয়ে দেয়। অপমান আর রাগে সে কামরুলের দিকে তাকালে কামরুল তাকে দুটি থাপ্পড় দিয়ে বলে ওভাবে তাকালে কামরুল তার চোখ তুলে নেবে। এই অপমান আর তাচ্ছিল্যের বদলা নিতে সে কামরুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কামরুলের সঙ্গে স্থানীয় এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সোনিয়া তার সঙ্গে গোপনে দেখা করতে চায় এমন মিথ্যা কথা বলে সে কামরুলকে রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সোনিয়ার বাড়ির পাশে কামরুলকে রেখে সে শীতের কথা বলে কামরুলের গায়ে জড়ানো চাদর নেয়। এরপর কাছে থাকা দা দিয়ে তার ঘাড়সহ দেহে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং আঙুল দিয়ে তার চোখ তুলে নেয়।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা, কামরুলের চাদর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান এসপি লিটন কুমার সাহা। শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মিনহাজ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে কামরুলকে কে বা কারা মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে আর বাড়ি ফিরে না আসায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর রবিবার দুপুরে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। বিকালে এলাকার শিশুরা খেলতে গিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে ঘাসের মধ্যে পায়ের মোজা দেখতে পায়। বিষয়টি জানতে পেরে রাত আটটার দিকে পরিবারের লোকজন ওই স্থানের আশেপাশে সন্ধান করতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাশের নুরু মিয়ার বাঁশবাগানে গিয়ে কামরুলের মরদেহ শনাক্ত করে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে।