X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

শত শত মানুষ হত্যা করে মুরগির খামারের কুয়ায় ফেলতো হানাদাররা

তৌহিদ জামান, যশোর
০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:২৫

শত শত মানুষ হত্যা করে মুরগির খামারের কুয়ায় ফেলতো হানাদাররা

যশোর শহরের দক্ষিণ দিকে শংকরপুর এলাকায় আইয়ুব খানের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হয় হাঁস-মুরগির খামার। এটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় খামার। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এখানকার অবাঙালি সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থান থেকে অগণিত বাঙালিকে ধরে এনে হত্যা করে ফেলে রাখতো খামারের মধ্যে কূপে। এভাবেই জায়গাটি পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। সরকারি হাঁস-মুরগি খামার সংলগ্ন স্থানে পরে গড়ে তোলা হয়েছে একটি সৌধ।

১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর এই বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ‌্য নিবেদন করেন যশোরের সব শ্রেণি পেশার মনুষ।

এই বধ্যভূমি সম্পর্কে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বিহারিরা (অবাঙালি) এখানে হত্যাযজ্ঞ চালায়। হাবিব, টেনিয়া, কালুয়া, রমজান, মোস্তফা ছাড়াও সেইসময় শহরের অবাঙালি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থান থেকে বাঙালিদের ধরে এনে গলা কেটে হত্যা করতো।

স্থানীয়রা জানান, শত শত মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। খামারের ভেতরে মুরগি রাখার ৪ ও ৫ নম্বর শেডে লাশ পুঁতে রাখা হতো। এই শেডের পাশে ছিল পাম্প হাউস। পাশে ছিল বিরাট কুয়া। এই কুয়াটি খনন করা হয় মরা মুরগি ফেলার জন্য। সেই সময় ওই কুয়ায় বাঙালিদের লাশ ফেলা হতো।

শত শত মানুষ হত্যা করে মুরগির খামারের কুয়ায় ফেলতো হানাদাররা

সরকারি হাঁস-মুরগি খামারের পাশে কালিতলার গায়ে ১৯৯১ সালে একাত্তরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালে সরকারি উদ্যোগে দর্শনীয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম এটি উদ্বোধন করেন।

সেই সময় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে এই বধ্যভূমিতে প্রথম স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হারুন অর রশিদ ও সুকুমার দাস বলেন, ১৯৯১ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে যশোরে বিজয়ের ২০ বছর পালন করা হয়। ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে আমাদের আরেক বন্ধু সাংবাদিক ফখরে আলম শংকরপুর কালীতলায় বধ্যভূমিতে একটি স্তম্ভ নির্মাণে সহায়তা করেন।  মূলত জোটের উদ্যোগে প্রথম সেখানে পিলারের মতো একটি স্তম্ভ তৈরি করে আমরা সে বছর ১৪ ডিসেম্বর প্রথম শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করি।

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘খামারের মধ্যে বড় বড় দুটো কুয়া ছিল। যেখানে রোগাক্রান্ত মৃত মুরগি ফেলা হতো। পাকিস্তানি আর্মি ও এদেশে থাকা তাদের দোসর বিহারিরা ওই কুয়া দুটোয় বাঙালিদের হত্যা করে ফেলতো। স্বাধীনতার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী এখান থেকে কয়েক ট্রাক হাড়-কঙ্কাল সরিয়ে নিয়ে যায়। এগুলো আমরা দেখেছি।’

শত শত মানুষ হত্যা করে মুরগির খামারের কুয়ায় ফেলতো হানাদাররা জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যশোর জেলার সাবেক কমান্ডার রাজেক আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিহারিদের মধ্যে মাস্তান শ্রেণির যারা ছিল, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙালিদের ধরে এনে পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতায় হত্যা করে এখানে ফেলতো। তারা শত শত বাঙালিকে হত্যা করে। পরে যশোরের সংস্কৃতিমনা লোকজন সেখানে প্রথম একটি স্তম্ভ তৈরি করেন।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বধ্যভূমির এই সৌধ সংস্কার ও আধুনিকীকরণে মন্ত্রণালয় থেকে বড় অঙ্কের টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু সরকারি খামার কর্তৃপক্ষ জায়গা দিতে না চাওয়ায় সেই প্রকল্পটি থেমে রয়েছে।’

এ বিষয়ে যশোর সরকারি হাঁস মুরগি খামারের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. সফিকুর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকায় রয়েছি। এ সংক্রান্ত একটি সরকারি চিঠি পেয়েছি। ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইছি না।’

শত শত মানুষ হত্যা করে মুরগির খামারের কুয়ায় ফেলতো হানাদাররা প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হলে সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, সামরিক কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধারা এই বধ্যভূমি পরিদর্শন করেন। তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র, আশাপূর্ণা দেবী বধ্যভূমি ঘুরে দেখে হতবাক হয়ে যান।

এর বাইরেও যশোর শহর ও শহরতলী এলাকায় বেশ কয়েকটি বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে−বিরামপুর, ধোপাখোলা, খয়েরতলা, হর্টিকালচার সেন্টার, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, কোতোয়ালি থানা চত্বর, বকচর, ব্যাপটিস্ট চার্চ, রূপদিয়া, রেলস্টেশন মাদ্রাসা, চৌগাছার ডাকবাংলো। 

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ