X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

যেসব কারণে আলোচিত ছিলেন জয়নাল হাজারী

ফেনী প্রতিনিধি
২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৪আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:৩০

রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময় আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন হাজারী। জেলা পর্যায়ের নেতা হয়েও এক সময় জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকলেও গত ১০ বছর রাজনৈতিকভাবে ছিলেন অনেকটা ‌‘নিঃস্ব’।

জয়নাল হাজারী ১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে জন্ম নেন। তারা বাবা আব্দুল গণি হাজারী ও মা রিজিয়া বেগম।  সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। 

ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশের (বর্তমান ছাত্র সংসদ) জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন জয়নাল হাজারী।

সংসদ সদস্য হিসেবে শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী

১৯৭১ সালে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন জয়নাল হাজারী। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে যান। ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে একটি সিভিল ডিফেন্স টিম গঠন করেন।

১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মারা যান। এই পেক্ষাপটের পেছনে হাজারীকে সন্দেহ করা হয়। ২০০১ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৬ আগস্ট রাতে তার বাসভবনে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। 

সংসদ সদস্য হিসেবে শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কার হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন। ফেনী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক হাজারিকা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার। এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন।

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার দেড় দশক পর দলীয় পদে ফেরেন জয়নাল হাজারী। ২০১৯ সালে ফেনীর এই নেতাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকে এই পদে মনোনয়ন দেন। এর আগে হাজারীর চিকিৎসার জন্য একই বছরের সেপ্টেম্বরে ৪০ লাখ টাকা অনুদান দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি ও তার বাহিনীর কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

তবে হাজারীর দাবি ছিল, ‘স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শত্রু জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। যারা আমাকে বিতর্কিত বলে তারাই বলতে পারবে কেন বলে।’

দেশের আলোচিত বিভিন্ন ইস্যুতে মন্তব্য করে আলোচনায় আসতেন তিনি। আলোচিত পরিমণিকাণ্ড ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ‘সত্যবচন’ নিয়েও কথা বলেছিলেন।

জয়নাল হাজারী প্রিন্সেস ডায়নার মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমের বাড়াবাড়ি, মানুষের অযাচিত কান্না ও শেষকৃত্যে জনতার ঢল এবং মাদার তেরেসার মৃত্যুকে উপেক্ষা করার ঘটনা নিয়েও কথা বলেন।

হাজারী আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, ‘মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়ে মারা যাওয়া ডায়নাকে নিয়ে এত কিছু হলো, যদিও তার দুই দিন পরই মাদার তেরেসার মৃত্যু হয়। কিন্তু তেরেসাকে নিয়ে সেই অর্থে মানুষেরা বা গণমাধ্যম তেমন আগ্রহ দেখায়নি। তার শেষকৃত্যে এক হাজার মানুষও উপস্থিত হয়নি এবং গণমাধ্যমেও তেমন খবর আসেনি। এই হলো পৃথিবী।’

‘চিরকুমার’ ছিলেন জয়নাল হাজারী

ব্যক্তিগত জীবনে ‘চিরকুমার’ ছিলেন জয়নাল হাজারী। কলেজজীবনে প্রেমিকা বিজুকে হারিয়ে তার বিরহে আর বিয়ে করেননি বলে দাবি করেছিলেন তিনি।  

বছরখানেক আগে একটি টিভি অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমি যখন কলেজে পড়ি। তখন বিজুও কলেজের ছাত্রী। আমি গান লিখতাম, বিজু গাইতো। এভাবেই প্রথমে আমাদের পরিচয়। পরে ভালোবাসা হয়। যুদ্ধের সময়ে আমি যখন চলে গেলাম তখন তারা সোনাগাজী এলাকায় আত্মগোপন করে।

পরে একজন রাজাকার তাকে জোর করে বিয়ে করেছিল। বিজুর সঙ্গে কথা হয়েছিল, আমরা কেউ কাউকে ছাড়া বিয়ে করবো না। তবে যুদ্ধের সময়ে সংবাদ পেয়েছিলাম, তার বিয়ে হয়ে গেছে। চাইলে জোর করে এনে আবারও বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু তা আমি করি নি। বিজু আমাকে যে ওয়াদা করেছিল তা ভেঙেছে। এই জন্যই তখন এটাই বিচার চেয়েছিলাম। এরপর কখনও বিয়ে বা কোনও নারী নিয়ে চিন্তাই করিনি।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
ঢাকায় চিকিৎসায় এসে একই পরিবারের ৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
জুলাই সনদ ঘোষণাসহ তিন দাবিতে ‘মার্চ ফর জুলাই রিভাইভস’ পদযাত্রা
জুলাই সনদ ঘোষণাসহ তিন দাবিতে ‘মার্চ ফর জুলাই রিভাইভস’ পদযাত্রা
পোশাক কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজন গ্রেফতার
পোশাক কারখানায় শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও একজন গ্রেফতার
ইউএসএআইডির অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্তে মৃত্যুঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ: গবেষণা
ইউএসএআইডির অনুদান বাতিলের সিদ্ধান্তে মৃত্যুঝুঁকিতে দেড় কোটি মানুষ: গবেষণা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া
জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’