‘আমরা দরিদ্র মানুষ। ঠিকমতো তিনবেলা খেতে পারি না। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে জীবনের দীর্ঘ সময় পার করেছি। ঝড়বৃষ্টি এলেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পাশের স্কুলে ঠাঁই নিতাম। প্রতিদিন ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছি, যাতে আমাদের এই দুরবস্থার পরিবর্তন হয়। ভগবান প্রার্থনা শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নতুন ঘর দিয়েছেন। প্রার্থনা করি, শেখ হাসিনা যুগ যুগ বেঁচে থাকুক, আবারও ক্ষমতায় আসুক।’
দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর করায় এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করেছেন রাঙামাটি শহরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শুকরছড়ি গ্রামের মালা চাকমা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে উপহারের ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হন তিনি।
নিজেদের সহায়-সম্বল ছিল না উল্লেখ করে মালা চাকমা বলেন, ‘আমাদের জায়গা-জমি কিছুই নেই। জায়গা কিনে ঘর করার মতো সামর্থ্য নেই। এখন জায়গা ও ঘর পেয়েছি। জীবনের বাকি দিনগুলো শান্তিতে কাটাতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘যেদিন ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল সেদিন থেকে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করেছি, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকুক, সব বিপদে নিরাপদে রাখুক ভগবান। আবার যেন ক্ষমতায় এসে মানুষের আরও সেবা করতে পারে।’
ঘরের অভাবে অনেক দুঃখে-কষ্টে আমাদের দিনগুলো কেটেছে জানিয়ে সাপছড়ি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রহিম বলেন, ‘আমার এক ছেলে প্রতিবন্ধী। ঘর না থাকায় কষ্টে ছিলাম এতদিন। অবশেষে উপহারের ঘর পেয়েছি। সেইসঙ্গে আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছি।’
বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুভাশীষ চাকমা ও অপর্না চাকমা বলেন, ‘আমরা মাছ ধরে ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। সবসময় একটি ঘর বানানোর স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে স্বপ্নপূরণ সম্ভব ছিল না। বৃদ্ধ বয়সে এসে সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভগবান তাকে দীর্ঘজীবী করুক।’
আমার ইউনিয়নের প্রত্যেক এলাকা দুর্গম উল্লেখ করে বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অমর চাকমা বলেন, ‘এখানে উপহারের ঘর নির্মাণ করা কঠিন কাজ ছিল। শতভাগ চেষ্টা করেছি, সঠিকভাবে কাজ করার। দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬০টি ঘর ইউনিয়নের উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করেছি। আরও কিছু ভূমিহীন পরিবার আছে। সামনে তাদেরও ঘর দেওয়া হবে।’
চেয়ারম্যান হয়েও এত সুন্দর ঘর আমার নেই উল্লেখ করে সাপছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রাম্যান প্রবীন চাকমা ভাগ্য বলেন, ‘দরিদ্র এসব পরিবারকে যেসব ঘর দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আসলেই উন্নতমানের। উপহারের এসব ঘর পেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। দুর্গম এই এলাকায় কাজ করা কঠিন ছিল। নির্মাণসামগ্রী পৌঁছানো ছিল চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কাজের শতভাগ গুণগতমান ঠিক রেখে ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জেলায় চতুর্থ ধাপে ৪৩৯টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘এসব ঘর আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করে উপকারভোগীদের বুঝিয়ে দেবেন।’
এ নিয়ে সোমবার (২০ মার্চ) সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে রাঙামাটিতে চতুর্থ ধাপে ৪৩৯টি ভূমিহীন পরিরার পাচ্ছে নতুন ঘর। দুর্গম পাহাড়ের কারণে এসব ঘর নির্মাণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গুণগতমান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘরগুলোর কাজ শেষ করেছি আমরা। এ পর্যন্ত জেলায় এক হাজার ৯২৬টি ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ঘরগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহায়ণের সঙ্গে কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সেবা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে দরিদ্র এসব পরিবার।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম ফেরদৌস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন।