X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌরবিদ্যুৎ মিনি গ্রিডে আগুন: দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
১০ জুলাই ২০২৩, ১৯:৫৭আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩, ২০:৪৬

কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নে ৩৫০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মিনি গ্রিডে আগুনের ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ব্যাটারি রাখার কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত কোনও নাশকতা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রিড কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের মিনি গ্রিডে আগুন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ৪২০ পরিবার

এর আগে রবিবার (৯ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের চরসাজাই গ্রামের কানেশিয়া সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে গ্রিডে থাকা ২৮৮টি ব্যাটারি পু‌ড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৭টি ইনভার্টার। এ ঘটনায় গ্রিডের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের আওতায় থাকা ৪২০টি পরিবারে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। আগুনের ঘটনা ঘটলেও প্রকল্প এলাকাটি নদীবেষ্টিত দ্বীপচর হওয়ায় আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। সবকিছু পুড়ে ছাই হওয়ার পর ধীরে ধীরে আগুন নিভে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।

গ্রিড কর্তৃপক্ষ জানায়, কানেশিয়া সোলার মিনি গ্রিড প্রকল্পটি ৩৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। ২০১৮ সালে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) অর্থায়নে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চালু করা হয়। এক্সিলোন বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানি প্রকল্পটি পরিচালনা করে আসছে। হাইব্রিড সিস্টেম এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্থানীয় ৪২০টি পরিবারকে সরবরাহ করা হয়। ত‌বে পরবর্তী‌ সময়ে পল্লী বিদ‌্যুতায়ন বোর্ড ওই এলাকায় বিদ‌্যুৎ সঞ্চালন লাইন চালু ক‌রায় প‌রিবারগু‌লো উভয় সরবরাহ লাইন থে‌কে বিদ‌্যুৎ সু‌বিধা পে‌য়ে আস‌ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রিডের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা নাও হতে পারে। এর পেছনে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। কয়েক মাস ধরে তারা বিভিন্নভাবে প্রক‌ল্পের বি‌রোধিতা করে আসছে। বিষয়টি তদন্তের দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গ্রিডের নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ নিয়ে একটি পক্ষ সংক্ষুব্ধ ছিল। তারা বিভিন্ন সময় হুমকিও দিয়েছিল। এ ছাড়াও ওই পরিবারগুলো প্রভাব খাটিয়ে কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ বিলও দিচ্ছিল না। এই অগ্নিকাণ্ড ওই পক্ষের ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

গ্রিডে থাকা টেকনিশিয়ান ও নিরাপত্তাকর্মীরা বলেছেন, ব্যাটারির চার্জ কম থাকায় শ‌নিবার দিবাগত রাত ২টায় গ্রিড শাটডাউন করা হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় ব্যাটারি ওভার চার্জ হওয়া সম্ভব নয়। এই সিস্টেমে ওভার চার্জ হওয়ার সুযোগও নেই। এ ছাড়াও শর্টসার্কিট হওয়ার মতো কোনও অবস্থাও ছিল না। ফলে দুর্ঘটনায় আগুন লাগার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এটি কোনও পরিকল্পিত নাশকতা হতে পারে।

গ্রিডের নিরাপত্তাকর্মী লিটন বলেন, ‘রাতে আমি প্ল্যান্টের ভবনেই থাকি। প্রতিদিনের মতো রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি গ্রিডের সবকিছু যাচাই করি। রাতে গ্রিড বন্ধ করা হয়েছিল। সকালে ব্যাটারির চার্জও ছিল কম, কন্ট্রোলারে হলুদ বাতি জ্বলছিল। এরপর আমি ৭টার দিকে খাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়িতে যাই। পৌনে ৮টার দিকে খবর পাই আগুন লেগেছে। এমনি এমনি আগুন লাগার কোনও অবস্থা ছিল না। এটি পরিকল্পিত হতে পারে। হয়তো বাইরে থেকে কেউ আগুন দিয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা যেহেতু দেখিনি, তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’

প্রকল্প চত্বরে বহিরাগতদের প্রবেশের বিষয়ে লিটন বলেন, ‘আমি যাওয়ার সময় মূল ফটকে তালা দিয়ে যাই। তারপরও এর পাশ দিয়ে টপকে প্রকল্প চত্বরে প্রবেশে করা যায়। স্থানীয় অনেকে এভাবে ভেতরে প্রবেশও করে। তবে অগ্নিকাণ্ডের দিন কেউ ওভাবে প্রবেশ করেছিল কিনা তা আমরা দেখতে পারিনি।’

গ্রিডের টেকনিশিয়ান জাহিদ হাসান বলেন, ‘প্ল্যান্টে ব্যাটারি ও ইনভার্টারের কক্ষ আলাদা। আমি নিজে ভবনের ওপরতলায় থাকি। ব্যাটারিতে চার্জ কম থাকায় রাত ২টার দিকে গ্রিড শাটডাউন করা হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের সময় গ্রিড বন্ধ ছিল। ব্যাটারির কক্ষে শর্টসার্কিট হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু ব্যাটারির কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কোনও বিস্ফোরণও ঘটেনি। ফলে এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে আমি সন্দিহান। এটি তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না।’

‘কীভাবে আগুনটা লেগেছে তা কোনোভাবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে কোনও শর্টসার্কিটের কারণে না। কারণ গ্রিড বন্ধ ছিল। কেউ ষড়যন্ত্র করছে কিনা, সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এলাকায় কিছু লোক আছে যারা সবসময় আমাদের কোম্পানির ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তারা পরিকল্পনা করে এ কাজ করেছে কিনা তাও বলতে পারছি না’- যোগ করেন জাহিদ হোসেন।

স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের ক্ষুব্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই টেকনিশিয়ান বলেন, ‘হ্যাঁ, কয়েকটি পরিবার প্রকল্পের ওপর ক্ষুব্ধ রয়েছে। কিন্তু তারা কিছু করেছেন কিনা তা আমি বলতে পারবো না। কেন অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে জানা যাবে।’

ওই পরিবারগুলোর বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার বিষয়ে জাহিদ বলেন, ‘চার-পাঁচটি পরিবার বিদ্যুৎ বিল দিতে চায় না। এরমধ্যে কারও পাঁচ মাস আবার কারও সাত-আট মাসের বিল বকেয়া রয়েছে।’

পরবর্তী ব্যবস্থার বিষয়ে জাহিদ বলেন, ‘ঘটনার পর পুলিশ ও ইডকলের একজন প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার আমাদের কোম্পানি থেকে প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবীর ছক্কু বলেন, ‘আশপাশের কিছু পরিবার প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছিল। তারা কিছু করেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করলে আগুনের প্রকৃত কারণ বের হয়ে আসবে।’

রাজিবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। নাশকতার কোনও অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

/এমএএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় একে একে পরিবারের সবার মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
সর্বশেষ খবর
রাফাহ শহরে নতুন করে  ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
রাফাহ শহরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
যশোরে তীব্র গরমে মরে যাচ্ছে মাছের পোনা, ক্ষতি ‌‘২০ কোটি টাকা’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ