X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর

‘আমার বিশ্বাস, মায়ের হত্যার বিচারের রায় একদিন কার্যকর হবে’

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর 
২১ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪৫আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৩, ১৯:২৫

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ণ গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নিহত হন। আজ ২১ আগস্ট ১৯ বছর পূর্ণ হলো। ১৯ বছরেও বিচারের রায় কার্যকর হয়নি। এতে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন তার স্বজনরা। 

২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে ২১ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশ ছিল। সমাবেশ শেষে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তি মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। অন্যান্যদের মতো রেজিয়া বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিল শুরুর আগ মুহূর্তে ট্রাকের ওপর নির্মিত খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর বিকাল ৫টা ২২ মিনিটে তাকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলা করা হয়। বিকট শব্দে পর পর বিস্ফোরিত হয় ১৩টি গ্রেনেড। প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তারপরও শেখ হাসিনার গাড়িকে লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। নারকীয় ওই হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রেজিয়া বেগমসহ ২৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন কয়েক শত নেতাকর্মী।

স্বজনরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রেজিয়া বেগম ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকা পাড়ি জমান। ঢাকার বাড্ডা এলাকায় ভারতীয় ভিসা অফিসে ছবি লাগানোর কাজ করতেন তিনি। ভাড়া থাকতেন একই এলাকায়। সেখানেই মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আয়শা মোকারমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে রেজিয়া বেগম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সমাবেশে মিছিলে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২১ আগস্ট সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে আয়শা মোকারমের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে রেজিয়াও ছিলেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে মিছিল বের হওয়ার আগ মুহূর্তে দুর্বৃত্তদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে সভাস্থলেই নিহত হন রেজিয়া বেগম। 

পরের দিন ছোট ছেলে নুরন্নবী মায়ের লাশ শনাক্ত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের ইচ্ছা ছিল মায়ের লাশ রংপুরের কাউনিয়ায় বাড়িতে এনে দাফন করতে। কিন্তু বিএনপি সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নিজেদের খরচে লাশ নিতে বলেন। ওই সময় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১২ হাজার টাকা দাবি করায় তাদের পক্ষে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহায়তায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নুরন্নবী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিনতেন এবং স্নেহ করতেন। ওই সময় বিএনপি জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে তার মা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনার ট্রাকমঞ্চের কাছেই ছিলেন মা। ফলে গ্রেনেড হামলায় তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ফলে তাকে বাঁচানো যায়নি।

নুরন্নবী আরও জানান, তার মায়ের বীরের মতো মৃত্যুবরণ বিএনপি সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল, এটাই আমাদের গর্বের বিষয়। তিনি জানান, একই সালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের জন্য দেওয়া হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাদের ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল আমাদের সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। তবে সেটা দীর্ঘ ১০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এখন তাদের চাওয়া শুধু মায়ের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা। 

রেজিয়ার বড় বোন আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর ২১ আগস্টের ঘটনাগুলো টেলিভিশনে দেখি আর কাঁদি। চোখের পানি ফেলা ছাড়া আমাদের কী করার আছে?।’ 

নুরন্নবী বলেন, ‘আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। এ সরকারের আমলেই রায় কার্যকর চাই আমরা। ঘটনার মূল হোতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া হোক। তাহলেই আমার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।’ 

বড় ছেলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘৩৯ বছর পর হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, মায়ের হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হবে।’ 

স্থানীয় বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, ‘আমি রেজিয়ার পরিবারকে সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিভিন্নভাবে তাদের সহায়তাও করা হচ্ছে।’

/এসএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আল্লাহ রহমতের চাদর দিয়ে নেত্রীকে রক্ষা করেছেন: মতিয়া চৌধুরী
আইভি রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাবিএনপির আন্দোলনে নেতাকর্মী আছে, জনগণ নেই: ওবায়দুল কাদের
২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড: তারেকের পৃষ্ঠপোষকতা মনে করিয়ে দিলেন জয়
সর্বশেষ খবর
শাপলা চত্বর ও শাহবাগের দূরত্ব
শাপলা চত্বর ও শাহবাগের দূরত্ব
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৪
সহজ রেসিপিতে কোল্ড কফি বানাবেন যেভাবে
সহজ রেসিপিতে কোল্ড কফি বানাবেন যেভাবে
মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে: প্রতিমন্ত্রী
মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে আসবে: প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের