X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘একের পর এক প্রকল্প নিয়েও কপোতাক্ষ নদকে প্রবহমান করা যায়নি’

খুলনা প্রতিনিধি
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:০৫আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:০৬

কপোতাক্ষ নদের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালি শেষে আলোচনা সভায় তারা বলেছেন, ‘সরকার একের পর এক প্রকল্প নিয়েও কপোতাক্ষ নদকে প্রবহমান করা যায়নি। বরং দখল ও দূষণে নদটি প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে। তাই কপোতাক্ষ বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জনগণকে সচেতন হতে হবে।’

রবিবার খুলনা জেলার পাইকগাছায় অনির্বাণ লাইব্রেরি মিলনায়তনে কর্মসূচির আয়োজন করে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাতীয় নদী জোট, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং সচেতন সংস্থা।

পাইকগাছায় ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, আসুন এর অধিকার নিশ্চিত করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অনির্বাণ লাইব্রেরির সাবেক সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক সমীরণ দে। সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনায় অংশ নেন মাহমুদকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীলিমা ঢালী, হরিঢালী হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মানিক ভদ্র, অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ ও কল্যাণ সম্পাদক বাসুদেব ভদ্র, হরিঢালী ইউপি সদস্য স্মিতা মণ্ডল, সাবেক ইউপি সদস্য কুমারেশ দে ও ডা. সন্তোষ দাশ, পল্লী চিকিৎসক ডা. পিন্টু বিশ্বাস, উন্নয়নকর্মী অমর ঘোষ, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রিয়াদ হোসেন, নদী কর্মী অসীম দেবনাথ ও আলাউদ্দিন মোড়ল।

সভায় বক্তারা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি দখল ও দূষণে সারা দেশের নদ-নদীগুলো মারা যাচ্ছে। এরপর অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, আবাসন, সেতু ও কালভার্ট এবং অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদীর অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এতে বাংলাদেশ একদিকে পরিণত হচ্ছে শুষ্ক ভূমিখণ্ডে, অন্যদিকে এসব মৃতপ্রায় নদ-নদীর পানি উপচে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে ধেয়ে আসছে নানা ধরনের সংকট। জীবিকা হারিয়ে অনেক মানুষ নদীপাড় ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। আবার পরিকল্পিত নদী শাসনের অভাবে ভাঙনে প্রতি বছরই অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।’

সভায় বক্তারা বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্ট বলেছে “নদী একটি জীবন্ত সত্তা”। তাই নদী-খালকে যারা হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতার প্রভাবে মানুষ নদী দখল করছে। নদী আমাদের জনজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নদীসহ উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।’

এদিকে, মোংলায় আয়োজিত সভায় বক্তারা বলেন, ‘সুন্দরবনের প্রাণ পশুর নদসহ উপকূলের নদ-নদী দখল ও দূষণে আক্রান্ত। সুন্দরবনের নদী-খালে বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধন করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন নদীর ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। মোংলায় শতাধিক প্রবহমান সরকারি নদী-খাল অবৈধ বাঁধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পশুর, রূপসা ও মোংলা নদীতে প্লাস্টিক দূষণের ফলে মাছের দেহে মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। এসব মাছ খেলে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হবে। সুন্দরবনের ইসিএ এলাকায় অপরিকল্পিত শিল্পায়নে নদীদূষণ হচ্ছে। নদী একটি জীবন্ত সত্তা, আসুন আমরা নদীর অধিকার অধিকার নিশ্চিত করি।’

রবিবার মোংলায় বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। এর মধ্যে ছিল– পশুর নদ প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা অভিযান, পশুর নদীতে গণগোসল, নদীকেন্দ্রিক গানের আসর এবং দিনরাত নদীর সঙ্গে আড্ডা, নদীতে আলোচনা সভা-মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, বাদাবন সংঘ, পিএফজি মোংলা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের আয়োজনে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।

দিনব্যাপী বিশ্ব নদী দিবসের নানা কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক পশুর রিভার ওয়াটারকিপার নূর আলম শেখ। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বাপা নেতা সৈয়দ মিজানুর রহমান, নাজমুল হক, কমলা সরকার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের হাছিব সরদার, পিএফজির শেখ শাকির হোসেন, পিএফজি নেতা এরশাদুজ্জামান সেলিম, বাদাবন সংঘের পপি বেগম ও হোসনে আরা, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার শেখ রাসেল, মেহেদী হাসান বাবু, ছবি হাজরা, সুষ্মিতা মণ্ডল, তন্বী মণ্ডল প্রমূখ।

প্রধান অতিথি নূর আলম শেখ বলেন, ‘জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন গোলের নদী-খাল-জলাশয় ও পরিবেশ বিষয়ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ধীরগতি লক্ষ করছি। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে নদ-নদী-জলাশয় দখল ও দূষণমুক্ত করার কথা বলা হলেও তা এখনও অর্জিত হয়নি। নদী তীরবর্তী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়ার কথা টেকসই উন্নয়নে গোলে বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। টেকসই উন্নয়নে ১৩ নম্বর গোলের লক্ষ্যমাত্রায় বলা হয়েছে। উপকূলের নদ-নদী ও জলাশয়কে দখল এবং দূষণমুক্ত করার মাধ্যমে সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘নদী বিষয়ক হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। নদীর অভিভাবক নদী কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নদী রক্ষা কমিটিকে সক্রিয় করা জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
সর্বশেষ খবর
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
ভিত্তিপ্রস্তরের ১৪ বছর পর চট্টগ্রাম নগর ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
লোকসভা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপের ভোটে হেভিওয়েট প্রার্থী যারা
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র