কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে৷ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকায়। এ ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় চার ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত আরও ১১ ছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের কারও মাথা ফাটা, কারও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন।
আহতরা হলেন– পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শাকিল, রসায়ন তৃতীয় বর্ষের হাসান ও আরাফাত, বাংলা চতুর্থ বর্ষের হাবিব, অর্থনীতি প্রথম বর্ষের ইমরান, ইসলামের ইতিহাস তৃতীয় বর্ষের আবদুল কাহহার, গণিত চতুর্থ বর্ষের রতন, ব্যবস্থাপনা দ্বিতীয় বর্ষের আরমান, অর্থনীতি চতুর্থ বর্ষের নিলয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের সাকিব, চতুর্থ বর্ষের জামশেদ ও মাস্টার্সের সানি।
আহত আবদুল কাহহার জানান, সোমবার বিকালে রাস্তা পারাপারের সময় তাকে একতা নামের বাস চাপা দেয়। এতে তিনি আহত হওয়ায় চালককে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেন। সে সময় সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন ছাত্র ছিলেন। তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন বাসচালক ও হেলপাররা। দুই ছাত্রকে বাসস্ট্যান্ডে আটকে রাখেন চালক ও হেলপার। আটকে থাকা ছাত্ররা জানালে সহপাঠীরা তাদের উদ্ধার করতে যান। এদিকে, বাসচালক ও হেলপাররা ছাত্রদের প্রতিহত করতে রাস্তায় দেশি অস্ত্র, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে অবস্থা নেন। ছাত্ররা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আহতদের আনতে গেলে অতর্কিত হামলা করেন চালক ও হেলপাররা। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় একটি চক্র। ঘটনাস্থলে যাওয়া ২০ ছাত্রকে তারা পিটিয়ে আহত করেন।
আহত আরেক ছাত্র রতন বলেন, ‘আমাদের তারা টার্গেট করে হামলা করেছে। আমার কাছে মোটরসাইকেল বিক্রির এক লাখ ৬০ হাজার ছিল। সেগুলো নিয়ে গেছে। আমাদের সহপাঠীদের পাঁচটির বেশি মোবাইল ফোন তারা নিয়ে গেছে। তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করায় আমরা রাস্তায় পড়ে থাকি। পরে স্থানীয়রা আমাদের অটোরিকশায় উঠিয়ে দেন।’
হাসপাতালে গিয়ে জানা গেছে, নয় জন ছাত্র কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। একজন হাসপাতালে ভর্তি। পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও পাঁচ জন।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া কলেজের ১১ শিক্ষার্থী কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে চার জনকে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে চলে যেতে পারবেন।’
একতা বাস সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কলেজ শিক্ষার্থীদের হামলায় আমার বাসচালকের অবস্থা খারাপ। একজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখেনি। তাকে চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’
কলেজের উপাধ্যক্ষ মৃণাল কান্তি গোস্বামী বলেন, ‘আমাদের ১৫ ছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একজনের মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা। আমাদের ছেলেরা রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে এসেছে। অধ্যক্ষ হাসপাতালে ভর্তি। তাই আসতে পারেননি। কাল অধ্যক্ষ স্যারসহ আলোচনা করে কী করা যায় ব্যবস্থা নেবো।’
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, ‘শাসনগাছায় একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। এ ঘটনায় অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।’