X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হালিমাকে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে চাননি ম্যালকম

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:১৫আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:২৪

বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে বই লিখতে ২০০১ সালে বাংলাদেশে আসেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ম্যালকম আর্নল্ড। আসা-যাওয়ার মাঝেই ভালোবেসে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন বাগেরহাটের মোংলার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া দরিদ্র নারী হালিমা বেগমকে। এরপর আর্নল্ড অস্ট্রেলিয়ার বাড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন ২০০৪ সালে। সেই থেকে এ দেশেই বসবাস করেন স্ত্রীসহ। ২০ বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি ঘটে গত ২৪ জানুয়ারি ম্যালকম আর্নল্ডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তিনি রয়ে গেলেন বাংলাদেশের মাটিতেই। খুলনার বসুপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

স্বামী তালাক দেওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে হালিমা বেগম মোংলায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের হয়ে নারীদের যৌন সমস্যা সচেতনতার বিষয়ে কাজ করতেন। ২০০১ সালে ম্যালকম আর্নল্ড বাংলাদেশে এসে মোংলায় ঘোরার জন্য আসেন। সে সময়ে হালিমার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। হালিমার বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এরপর চলে গেলেও তাদের মধ্যে চিঠি বিনিময় ছিল। এ অবস্থায় হালিমার গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা (ইউট্রাসে সমস্যা) শনাক্ত হয়। ঢাকার পিজি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক তার চিকিৎসা করছিলেন। তিনি হালিমাকে অপারেশন করাতে বলেন। কিন্তু অর্থ সঙ্কটে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না হালিমা। বিষয়টি তিনি চিঠির মাধ্যমে লিখে জানান ম্যালকমকে। এরপর বন্ধুদের কাছ থেকে ২০০০ ডলার সংগ্রহ করে ম্যালকম ২০০৩ সালে বাংলাদেশে আসেন এবং খুলনার হোটেল রয়েলে রেখে হালিমার চিকিৎসা করান। সুস্থ হওয়ার পর ফিরে যাওয়ার আগে হালিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং বাংলাদেশে থাকলেই হালিমা তাকে বিয়ে করতে পারবেন বলে জানান। এরপর ম্যালকম দেশে ফিরে যান এবং তার বাড়ি-জমি বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসেন এবং হালিমাকে বিয়ে করেন। সেই থেকে তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। একপর্যায়ে ম্যালকম চিত্রকর্মের মাধ্যমে আয় করার উদ্যোগ নেন। ছবি বিক্রিও হয় তার।

হালিমা জানান, ২০১৯ সালের করোনার ছোবলে ম্যালকমও মারাত্মক অসুস্থ হন। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার অবস্থা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা আসে। খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে ২০২২ সালে ৯০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। ম্যালকমের বড় ভাই গ্রায়েম আর্নল্ড ঘরভাড়া ও ম্যালকমের চিকিৎসা বাবদ একটা সহায়তা প্রতি মাসেই দিতেন। আর্থিক সংকটের কারণে ম্যালকমকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতেও বলেন হালিমা। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি, বাংলাদেশেই মরতে চেয়েছেন। এ দেশেই থাকতে চেয়েছেন। হালিমা অস্ট্রেলিয়ায় ম্যালকমের দুই মেয়ে ও বড় ভাইকেও বলেছিলেন তাকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু তারাও কোনও পদক্ষেপ নেননি।

তিনি আরও জানান, ২৩ জানুয়ারি রাতের খাবার ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ম্যালকম। ২৪ জানুয়ারি ভোরে ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পেয়ে তার কাছে যান। তখন তিনি মুখে স্প্রে দিতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। তারপরও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানান। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা ছিল তার।

হালিমা বেগম বলেন, ‘খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন ম্যালকম আর্নল্ড। আমার জন্য ইসলাম ধর্মও গ্রহণ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবার রয়েছে। আমি তাকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে বলতাম। কিন্তু ম্যালকম বলতেন, “তুমি ছাড়া আমার খেয়াল কেউ রাখতে পারবে না। আমি এ দেশেই থাকবো। এমনকি মারা গেলেও এই দেশের মাটিতেই আমাকে কবর দিও”।’

দাফনের বিষয়ে হালিমা জানান, ম্যালকমের মৃত্যুর পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ম্যালকমের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানান, বাংলাদেশে তাকে (ম্যালকমকে) দাফন করলে সমস্যা নেই। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে অনুমতি পেয়ে খুলনায় দাফনের জন্য জানায়। এরপর প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়। পরে ২৪ জানুয়ারি দিনগত রাতে এশার নামাজের পর বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ম্যালকম আর্নল্ডের মৃত্যুর সংবাদ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়। দূতাবাসেও ডকুমেন্টস পাঠানো হয়। দূতাবাস থেকে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ম্যালকমের পরিবারকে জানানো হয়। তারা স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এরপর রাতেই বসুপাড়া কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
সর্বশেষ খবর
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ