জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষকদের জন্য নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি, নির্মাণকাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের মারধর এবং কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সোমবার (৩ মে) বিকাল ৪টায় ‘জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে কর্মচারীদের মারধর করেন এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় কর্মচারীদের কাছে কার নির্দেশে কাজ শুরু করা হয়েছে জানতে চান এবং এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দেন তারা। নির্মাণকাজের জন্য সিমেন্টবাহী ট্রাক আসলে চালককে ভয় দেখিয়ে সেটি ফেরত পাঠিয়ে দেন তারা। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের মধ্যে একজন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ অপরজন সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, ‘বিকালে এখানে সাত থেকে আটটি বাইক নিয়ে ছাত্ররা আসে। তখন আমার কাছে জানতে চায় আমাদের ম্যানেজার কে। তখন ম্যানেজারকে দেখিয়ে দিলে তারা তাকে ডেকে নিয়ে যায় এবং দফায় দফায় চার জনকে মারধর করে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, ‘তারা আমাদের কোনও কথাই শোনেননি। আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে তারা বলে ‘তোদের এমডিকে কল দে, সে কী হয়ে গেছে যে, আমাদের এখানে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে হবে। সে আমাদের কোনও খোঁজখবর রাখে না। সে জানে না যে, জাহাঙ্গীরনগরে আসলে আমাদের সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলে তোদের এমডিকে বলিস যে, ভাইয়েরা আসছে। আমাদের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখে। আমাদের পরিচয় জানার দরকার নাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন টিচার্স কোয়ার্টারের ভবনটি মল্লিক এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে নির্মিত হচ্ছে। যদিও ভবনটির টেন্ডার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নামে হয়েছে।
এ বিষয়ে মল্লিক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কাজ বন্ধ করার খবর পেয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ভাইকে বিষয়টা জানিয়েছি। কেন আমার কাজ বন্ধ করা হলো জানতে চেয়েছি? তিনি তখন বলেছেন কারা কাজ বন্ধ করেছেন সে বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন।’
তার কাছে টাকা দাবি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে তো আর কাজ করতে আসেনি। কেন এসেছে তা আপনার বুঝতে পারেন।’
কাজ পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাল থেকে কাজ চলবে বলে আশা করি। কাজ বন্ধ রাখার কোনও কারণ দেখছি না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নাহিদ বলেন, ‘আমার বিষয়ে যে অভিযোগ করলো সে কী আমাকে চেনে। কীভাবে সে আমাকে চিহ্নিত করলো। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’
অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের কাছে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি এ বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেন। কিন্তু ঘটনাটি ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানের এমডি তাকে জানিয়েছেন উল্লেখ করলে তিনি এ বিষয়ে জানেন বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি আমাকে এ বিষয়ে আমাকে জানিয়েছিলেন। তখন আমি খোঁজ নিয়ে দেখতে চেয়েছি। তবে কারা কাজ বন্ধ করেছে তা জানতে পারিনি। এ কাজে কোনও ছাত্রলীগ কর্মী জড়িত নয়।’