চট্টগ্রাম আদালতে বিক্ষোভের মুখে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নেজাম উদ্দিন নামে এক আইনজীবী। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মো. মফিজুল হক ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবিতেও বিক্ষোভ ও গণস্বাক্ষর করেছেন।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার দুই আসামির পক্ষে আদালতে ওকালতনামা দেওয়ায় অতিরিক্ত পিপি নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করেন বিপুলসংখ্যক আইনজীবী।
আইনজীবীদের অভিযোগ, নেজাম উদ্দিন সরকারি কৌঁসুলি হওয়ার পরও আসামিদের পক্ষে আদালতে ওকালতনামা দিয়েছেন।
নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়ার জুনিয়র। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের তোপের মুখে ওকালতনামাও প্রত্যাহার করেন তিনি।
আদালতে বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার নয় জন এবং পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আট জনসহ মোট ১৭ জন আসামিকে কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
তাদের মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় আট জন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। সেখানে আসামি মোহাম্মদ দেলোয়ার ও মোহাম্মদ নুরুর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ওকালতনামা দেন অ্যাডভোকেট নেজাম উদ্দিন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর সরকারি কৌঁসুলি কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা ওই সময় মহানগর পিপি ও অতিরিক্ত পিপির পদত্যাগ দাবি করেন। আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে নেজাম অতিরিক্ত মহানগর সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
এ প্রসঙ্গে নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মূলত জানতাম না এই আসামিদের জন্য ওকালতনামা নিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আইনজীবীদের দাবি মেনে পদত্যাগ করেছেন নেজাম উদ্দিন। আমি ওকালতনামা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আলিফ হত্যা এবং পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চট্টগ্রাম বারের কোনও আইনজীবীকে অংশ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারপরও দুই আসামির পক্ষে একজন আইনজীবী ওকালতনামা দেওয়ায় আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। পরে বিক্ষোভের মুখে ওই ওকালতনামা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন নেজাম উদ্দিন।’
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বাধা দেন তার অনুসারীরা। তারা প্রিজন ভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বিজিবি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন।
এ ঘটনায় নিহত আইনজীবীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।