গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে এম এম নিটওয়্যার ও মামুন নিটওয়্যার লিমিটেড নামে দুটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৩০ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী কোনাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত কারখানা দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে কারখানার গেটে গিয়ে তারা বন্ধের নোটিশ দেখতে পান। হঠাৎ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় তাদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
মামুন নিটওয়্যার লিমিটেড পোশাক কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ) স্বাক্ষরিত বন্ধের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ৮টায় গার্মেন্টস ডিভিশনের শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজ বন্ধ এবং উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজ করার জন্য অনুরোধ করলেও ওই শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানার অভ্যন্তরে বেআইনি ধর্মঘট করে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাধ্য হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ বুধবার (৩০ এপ্রিল) থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার গার্মেন্টস ডিভিশনের সব সেকশন বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়। পরবর্তী সময়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে নোটিশের মাধ্যমে কারখানার গার্মেন্টস ডিভিশনের সেকশনগুলো খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
অপরদিকে, এম এম নিটওয়্যার লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ) স্বাক্ষরিত বন্ধের নোটিশে উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টায় কারখানার গার্মেন্টস, স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং এমব্রয়ডারি ডিভিশনের শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করে এবং কাজ বন্ধসহ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকদের কাজ করার জন্য অনুরোধ করলেও তারা কাজ না করে কারখানার অভ্যন্তরে বেআইনি ধর্মঘট করে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে কারখানা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাধ্য হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ বুধবার থেকে বাংলাদেশ শ্রম আইন ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানার গার্মেন্টস, স্ক্রিন প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ডিভিশনের সব সেকশন বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ দেয়। পরবর্তী সময়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে নোটিশের মাধ্যমে কারখানার ওইসব সেকশনগুলো খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কোনাবাড়ী এলাকায় এম এম গ্রুপের তিনটি কারখানা রয়েছে। সম্প্রতি কিছু শ্রমিকের অশোভন আচরণের অভিযোগে মালিকপক্ষ তিনটি কারখানা থেকে প্রায় ৩০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করে তাদের পাওনা পরিশোধ করে। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিককে মারধরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার ওই গুজবকে ইস্যু করে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। একপর্যায়ে কারখানার ভেতরে বেআইনি ধর্মঘট করে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এদিন রাত ১০টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, ছাঁটাই করা তাদের কয়েকজন সহকর্মীকে মালিকপক্ষের লোকজন মারধর করায় তারা কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান। ভয়ভীতি প্রদর্শন বা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেননি।
এ বিষয়ে এমএম নিটওয়্যার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শ্রমিকদের অশোভন আচরণের কারণে শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
গাজীপুর শিল্পপুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মালিকপক্ষ নিজেরাই সমস্যার সমাধান করে থাকেন। শ্রমিকদের মধ্যে অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখা দেওয়ায় কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কোনোরকম অস্থিতিশীল পরিবেশ এড়াতে কারখানার সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’