চট্টগ্রামে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর।
বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র জোটের ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র জোটের নেতারা। এতে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীরা অংশ নেন বলেও অভিযোগ তাদের।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে শাহবাগবিরোধী ঐক্য। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন ছাত্র জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সরে যাওয়ার সময় বাগবিতণ্ডার পর আবার হামলা চালানো হয়।
হামলায় ১২ জন আহত হন। এর মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর। তারা হলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস ও অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ। আহত বাকি নেতাকর্মীরা হলেন- গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইদুল হক, সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, ঢাকা নগরের সংগঠক তানভীর হোসেন, চটগ্রাম শাখার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, ইউএসটিসির সংগঠক সৌমেন, নগর শাখার অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক রিশাদ আমিন, সংগঠক ইশান বড়ুয়া ও শফিক ইসলাম। তারা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একপর্যায়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী আবরার হাসান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগর শাখার মুখ্য সংগঠন তওসিফ ইমরোজ উপস্থিত ছিলেন। তারা দাবি করেন, হামলার সময় তারা ছিলেন না। গন্ডগোলের খবর পেয়ে সেখানে এসেছেন।
জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী আবরার হাসান বলেন, একজন জামায়াত নেতার রায় নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল। একই সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যও সেখানে স্লোগান দিচ্ছিল। পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করছিল। তবে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি লেগে যায়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর শাখার সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে বিকালে প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করতে যাই আমরা। এ সময় ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলেও হামলাকারীদের বাধা দেয়নি। এ ঘটনায় ১২ জন আহত হন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মী নুরুল হক বলেন, ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নামে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছেন। হামলায় অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস, অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইদুল হক, সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, ঢাকা নগরের সংগঠক তানভীর হোসেন, চটগ্রাম শাখার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, ইউএসটিসির সংগঠক সৌমেন, নগর শাখার অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক রিশাদ আমিন, সংগঠক ইশান বড়ুয়া ও শফিক ইসলামকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের কর্মী এবং জুলাই ঐক্য মঞ্চের চট্টগ্রাম নগর সমন্বয়ক আবরার হাসান বলেন, ‘আদালতের রায়কে নিয়ে বাম জোটের নেতাকর্মীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তারা আদালতের রায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি দিয়েছেন। প্রেসক্লাবের সামনে আমরাও কর্মসূচি দিয়েছি। এ সময় তাদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়েছে। আমাদের কেউ তাদের ওপর হামলা করেনি।’
এ প্রসঙ্গে নগরের কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম বলেন, ‘জামায়াত নেতার মুক্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি ছিল। সেখানে বড় ধরনের কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে হামলার অভিযোগে আমরা ঘটনাস্থল থেকে দুই জনকে আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’