চট্টগ্রামে কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীকে আহত করার ঘটনায় ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দায়ী করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। জোটের নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের কায়দায় ছাত্রশিবির নারীসহ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আগে আমাদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করতো, এখন ছাত্রশিবির করছে। নামটা ভিন্ন হলেও হামলার জায়গায় আমরা কোনও ভিন্নতা দেখতে পাচ্ছি না। লাথি, ঘুষি ও মারধর; সবই ছাত্রলীগের কায়দায় করেছে ছাত্রশিবির।’
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকালে নগরের লাভলেইন এলাকায় মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে নারী কর্মীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত শিবির কর্মীদের গ্রেফতার ও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি রিপা মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র যুবা আন্দোলন নগর কমিটির সহসভাপতি ঈশা দে, ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌকির আহমেদ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক অংহ্লাসিং মারমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ।
লিখিত বক্তব্যে এ্যানি চৌধুরী বলেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী এ টি এম আজহারকে ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে শিবির দফায় দফায় হামলা চালায়। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালায়। নারী কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে।’
তিনি বলেন, ‘সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই শাহবাগবিরোধী ঐক্য নামের একটি উসকানিমূলক অনলাইন কর্মীরা হামলার মঞ্চ তৈরি করে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত জোটের কর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় শিবির। নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে আগুনে পোড়ানো হয়, নারী কর্মীদের অকথ্য গালিগালাজ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাদের এই হামলায় আহত হন অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী। এর মধ্যে তিন জন গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহতদের মধ্যে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস এবং অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হামলায় অংশ নেন নগর ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হোসাইন রিয়াদ, শিবির ক্যাডার আকাশ চৌধুরী, তৌকির, আসফারসহ আরও অনেকে। নারী নেত্রীদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও একাধিকবার হামলা হয়। শিবিরের সঙ্গে জড়িত আবরার হোসাইন, আকাশ চৌধুরী, তৌকির, আসফারসহ কয়েকজন এ হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রশিবির ন্যক্কারজনক হামলার মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করেছে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট তিন দফা দাবি জানায়। দাবিগুলো হলো- চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে, নারী নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ টি এম আজহারের দায়মুক্তির রায় পুনর্বিবেচনায় সর্বোচ্চ আইনি ও নৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
বুধবার বিকালে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। নগরের জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র জোটের ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে এ হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
তবে ঘটনাস্থলে শিবিরের কেউ ছিলেন না বলে বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার শিবিরের সভাপতি মো. তানজীর হোসেন ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক। শিবিরের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আকাশ চৌধুরী বর্তমানে শিবিরের দায়িত্বশীল কোনও পদে নেই। শিবিরের কোনও কর্মী এ ধরনের কাজে জড়িত নন।
হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের মুক্তির দাবিতে ওই দিন এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা। তবে ব্যানারে তাদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তারা। রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে শেষে ফিরে যান।