X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘নিজের দেওয়া আগুনে নিজেই পুড়ে মারা গেছেন মীম’

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
১৩ জুন ২০২৩, ২২:০৬আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩, ০০:৫০

পটুয়াখালীর দুমকিতে হাত-পা বেঁধে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে গৃহবধূ হালিমা আক্তার মীমের মারা যাওয়ার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, পারিবারিক কলহে অতিষ্ঠ হয়ে শাশুড়ি ও স্বামীকে ফাঁসাতে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছেন মীম। এতে মীম মারা গেলেও তার ছেলে দগ্ধ হয়। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন চাচাতো ভগ্নিপতি আরিফ হোসেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন আরিফ।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‌‘বিয়ের পর থেকে মীমের সঙ্গে শাশুড়ির দ্বন্দ্ব চলছিল। শাশুড়ি ও স্বামীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন আরিফ।’ 

গ্রেফতার আরিফ উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের কার্তিকপাশা গ্রামের মৃত হামেদ সিকদারের ছেলে ও মীমের চাচাতো বোনের স্বামী। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জে কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করেন। গত ৮ জুন বিকাল ৩টায় দুমকির শাজাহান মুন্সির টিনশেড ভাড়া বাসা থেকে হাত-পা বাঁধা অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মীমকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা। এ সময় তার ছয় মাসের শিশুপুত্র ওয়ালিফ হোসেন জিসান দগ্ধ অবস্থায় ছিল। পরদিন ৯ জুন বিকাল ৫টায় ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মীম মারা যান। ১০ জুন রাতে দুমকিতে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। বর্তমানে তার ছেলে জিসান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ওই দিনই মীমের মামা মো. ওমর ফারুক দুমকি থানায় মামলা করেন।

নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘মীম মারা যাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার দিন অগ্নিদগ্ধের পর বিকাল ৩টা ৩৩ মিনিটে কালো ক্যাপ, মুখে মাস্ক, আকাশি রঙের জামা, এবং কালো কেডস পরে এক যুবককে দৌড়ে ওই বাসার রাস্তা দিয়ে চলে যেতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। ১১ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে আরিফকে গ্রেফতার করে পটুয়াখালীতে নিয়ে আসা হয়।’

গ্রেফতারের পর আরিফ পুলিশের কাছে ওই দিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘মে মাসের শেষ দিকে মীমের সঙ্গে শাশুড়ি পিয়ারা বেগমের দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এ নিয়ে আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন মীম। এরই মধ্যে একদিন আরিফকে মীম বলেন, তার স্বামী জামাল হোসেন আগের মতো নেই। শাশুড়ি তাকে ও তার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করলেও স্বামী তা বিশ্বাস না করে মায়ের কথা বিশ্বাস করেন। এ কারণে স্বামী ও শাশুড়িকে শিক্ষা দিতে নিজের গায়ে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুসারে ৮ জুন সকালে আরিফকে পটুয়াখালী আসতে বলেন। বেলা আড়াইটার দিকে মীমের বাসায় পৌঁছেন। এরপর নিজেই নিজের গায়ে দুই লিটার কেরোসিন ঢেলে দেন। তার ছেলে জিসানকে সামনের রুমে রেখে আসেন। ফিরে এসে নিজেই নিজের পা ও মুখ বাঁধেন। পেছন দিয়ে হাত বেঁধে বিছানার পাশে এক কোণে মশারিতে আগুন দিয়ে চলে যান আরিফ। ঘটনার পরই আরিফ ঢাকায় চলে যান এবং ঢাকা থেকে দগ্ধ মীমের খোঁজখবর নেন। ওই দিন মীমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলেকে প্রতিপালনের জন্য আরিফকে অনুরোধ জানান মীম।’ 

মীম ও আরিফের পরিকল্পনায় এ ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘সোমবার পটুয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আরিফ। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে গ্রেফতার করা হবে।’

গ্রেফতার আরিফ হোসেন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মীম উপজেলার সাতানি গ্রামের জামাল হোসেন প্রিন্সের স্ত্রী। জামাল দুমকি বাজা‌রে ক‌ম্পিউটা‌র দোকা‌নে কাজ ক‌রেন। স্কুলজীবন থেকে তাদের প্রেম ছিল। কলেজে পড়ার সময় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে দুই পরিবারের বিয়েতে অমত থাকলেও পরে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কয়েক মাস পরই মীমের সঙ্গে শাশুড়ির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যা গড়ায় সালিশ বৈঠক পর্যন্ত। সর্বশেষ সালিশ বৈঠক হয়েছে গত ৩০ মে সন্ধ্যায়। পরে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ২ জুন স্বামীর সঙ্গে দুমকি উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় শাহজাহান মুন্সির ভাড়া বাসায় ওঠেন। ৮ জুন বিকালে মীমের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শাড়ি ও ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দগ্ধ মীমকে উদ্ধার করেন। এ সময় তার শিশুপুত্রের হাতসহ বিভিন্ন স্থান আগুনে দগ্ধ ছিল। ৯ জুন মীমের মামা ওমর ফারুক বাদী হয়ে দুমকি থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে মীমের শাশুড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

৩০ মে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত থাকা হালিমা আক্তার মীমের খালু লাল মিয়া বলেন, ‘সালিশে বউ-শাশুড়ির পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর একই বাড়িতে বসবাস কঠিন হয়ে পড়ে। পরে জামাল তার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় ওঠে। এ নিয়ে অনেকের অনেক কথা শুনেছে মীম। কেউ কেউ বলেছে, শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হয়তো এসব কথা সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে নিজেই আগুন দিয়েছে। তবু বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা দরকার পুলিশের।’

/এএম/
সম্পর্কিত
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
অরাজনৈতিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশসিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাজনৈতিক মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
সর্বশেষ খবর
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস