X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

কত টাকা ঘুষ নিতে হবে, তা নির্ধারণ করে দিলেন সহকারী কমিশনার, অডিও ফাঁস

পিরোজপুর প্রতিনিধি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:০৩আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:০৩

জমির নামজারি করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের (তহসিলদার) সঙ্গে সভা করে ছয় হাজার টাকা ঘুষ নির্ধারণ করে দিয়েছেন পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। গত জুলাই মাসে ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করে এ নির্দেশনা দেন তিনি। সভার কথোপকথনের একটি অডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অডিওতে জমির নামজারি করার জন্য ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের ছয় হাজার টাকা নিতে বলেছেন সহকারী কমিশনার। এর মধ্যে চার হাজার টাকা সহকারী কমিশনারকে দিতে বলেছেন।

এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমির নামজারি করতে এক হাজার ১৭০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে নাজিরপুর উপজেলার বাসিন্দাদের কাছে নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা নিচ্ছেন উপজেলা ভূমি অফিস এবং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই মাসে নাজিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা করেন সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমান। সভায় ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী নামজারি করতে ছয় হাজার টাকা ঘুষ নির্ধারণ করে দেন সহকারী কমিশনার।

সভায় ঘুষ নির্ধারণের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখান আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের কাছ থেকে চাপে আছি। ধরেন, আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইস যে ডিল করেন, এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না। আপনাদের মতামত শুনি, আপনারা কী চান? কত করে নেওয়া হোক? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন। সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। যদি বলেন স্যার, আপনি যদি না করে দেন, তাহলে নিশ্চিত করবো; আমরা কোনও টাকাপয়সার লেনদেন করবো না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনও হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচ আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে, যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেওয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমার জন্য বিব্রতকর।’

সভায় সহকারী কমিশনার আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে শাখারীকাঠী ইউনিয়ন তহসিলদার মো. সাখাওয়াত সাহেবের কথা হয়েছে। ধরেন, একজনের দুই একর জমি আছে, তার কাছ থেকে নামজারির ক্ষেত্রে কত টাকা নেবেন? যেহেতু তার জমি বেশি, তার কাছ থেকে বেশি টাকা নেবেন, এ রকম।’

উত্তরে সদর ইউনিয়নের তহসিলদার শাহজাহান কবির বলেন, ‘সব কেসে যেমন; এক একর, দুই একর, তিন একর বা তার চেয়ে বেশি জমির ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যেমন আগে পাঁচ হাজার ছিল। সেখানে আপনি বললে চার হাজার টাকা নামিয়ে আনতে পারি। আপনি যেভাবে বলবেন, স্যার।’  

তখন মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের তহসিলদার মো. সুজন বলেন, ‘দুই একরের বেশি জমি হলে তখন আমরা কত নেবো স্যার?’ এর উত্তরে শ্রীরামকাঠী ইউনিয়নের তহসিলদার পরিমল বলেন, ‘এটা স্যারের ওপর নির্ভর করে। আপনি আমাদের যেভাবে বলবেন, সেভাবে টাকা নেবো, স্যার।’ 

তাদের কথার উত্তরে সহকারী কমিশনার বলেন, ‘ধরেন, আমি চার হাজার নির্ধারণ করে দিলাম। তখন আপনারা কত ডিল করবেন? ক্লিয়ার কথা বলেন। প্রয়োজনে কথাগুলো রেকর্ড থাকবে।’

প্রথমে মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের তহসিলদার মো. সুজন বলেন, ‘এখানে যদি চার হাজার দেওয়া লাগে, তাহলে সাড়ে পাঁচ হাজার নিলেই হয়। তবে আমরা সর্বোচ্চ ছয় হাজারের বেশি নেবো না।’

এরপর সদর ইউনিয়নের তহসিলদার শাহজাহান কবির বলেন, ‘এখানের জন্য চার হাজারসহ মোট ছয় হাজার টাকা নিলেই হয়, স্যার।’

সেখমাটিয়া ইউনিয়নের তহসিলদার বলেন, ‘স্যার, ছয় হাজারই করা হোক। আমরা ছয় হাজার করেই নেবো।’

তখন সহকারী কমিশনার বলেন, ‘ছয় হাজার মানে ছয় হাজারই। ছয় হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেবো। এই অর্থবছরে প্রতিটি নামজারির জন্য আমাকে চার হাজার, আর আপনারা দুই হাজারসহ মোট ছয় হাজার করে নেবেন।’

এদিকে, উপজেলা সহকারী কমিশনারের ঘুষ নির্ধারণের অডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে উপজেলায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ঢাকায় আছি। নাজিরপুরে গিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলবো। তবে আমি এখানে যোগদানের পর কোনও ধরনের আর্থিক লেনদেনে জড়িত ছিলাম না। নাজিরপুরে যোগদানের পর থেকে একের পর এক ঝামেলায় জড়িয়ে যাচ্ছি। এমন হলে মানসন্মান নিয়ে বসবাস করবো কীভাবে।’ 

অডিওতে ঘুষ নির্ধারণে আপনার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, এসব কথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি তো তাদের নিয়ে বসলে কত কথা-ই বলি। তবে টাকার বিষয়টি বলিনি। কীভাবে এসব ফাঁস হলো, বুঝতে পারছি না।’

এ ব্যাপারে নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ বলেন, ‘অডিওর কথোপকথন শুনেছি। বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
পিনাকীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
ফার্নিচার কারখানায় ৬০০ বস্তা চিনি মজুত
শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আছিম বাসে আগুন দেয় ছাত্রদলের নেতারা: সিটিটিসি
সর্বশেষ খবর
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
৩৫ হাজার রিকশাচালককে ছাতা দেবে ডিএনসিসি
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে