X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘কী দোষে বিয়ে দিলে, জীবনটাই শেষ করে দিলাম’

বরিশাল প্রতিনিধি  
০৬ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৩আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৩

বরিশালে বিয়ের এক মাস ১০ দিনের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে 'আত্মহত্যা' করেছেন সাদিয়া আক্তার নামের (২০) এক নববধূ। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর পুরানপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাদিয়া ওই এলাকার মাহফুজ আলমের মেয়ে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট।  

গত ২৪ জানুয়ারি সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি মো. রুবেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল তার। বিয়েতে মেয়েকে স্বর্ণালংকার এবং জামাইকে ফ্রিজ, গলার চেইন ও আংটি দেওয়া হয়। এতে আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে।  

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকালে পরিবারের সবার অজান্তে বাবার বাড়ির ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন এই তরুণী। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধারের পর শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।  

আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে গেছেন সাদিয়া। সেখানে লিখেছেন, ‘আমি কী দোষ করেছিলাম, এমন একজন মানুষের জন্য নিজের জীবনটাই শেষ করে দিলাম। প্রত্যেক রাতে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য জ্বালায়। আমাকে বিয়ে দিয়েছিলে কেন। আমি তোমাদের কাছে বোঝা? টাকা চাইলে তো মন পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে কী ভালোবাসা পাওয়া যায়। আমি তোমাদের কষ্ট দিতে চাই না বাবা-মা। আমি একটু সুখ চাই।’  

সাদিয়ার ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, পারিবারিকভাবে এই বিয়ে হয়েছিল। রুবেলের মা ও ভাবি বিয়ে ঠিক করেছিল। শ্বশুর বাড়িতে নেওয়ার পর থেকেই খারাপ ব্যবহার করে আসছিল রুবেল। এমনকি ঠিকমতো কথাবার্তাও বলতো না। নানাভাবে তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। প্রথম দিকে বিষয়টি না জানালেও পরবর্তীতে ডিভোর্সের জন্য চাপ দিতে থাকে। ডিভোর্স না দিলে বিদেশ যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমাদের পক্ষে ওই টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মুখ বুঝে সব নির্যাতন সহ্য করে আসছিল।

কিন্তু যৌতুকের টাকা আদায় করতে না পেরে গত ৩ মার্চ আমার বাবাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলে রুবেল। সেইসঙ্গে তিন লাখ টাকা নিয়ে যেন সাদিয়াকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠায় তা জানিয়ে দেয়। ওই কথা শুনে বাবা তাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। এরই মধ্যে বোন এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তা কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি আমরা।  

স্থানীয় কাউন্সিলর সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, আট লাখ টাকা খরচ করে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। পরবর্তীতে বিদেশ যাওয়ার জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করে রুবেল। ওই টাকার জন্য মেয়ের বাবাকে রুবেলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেছিল। দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। রুবেলের নির্যাতনের কারণেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় রুবেলের কঠোর বিচার হওয়া উচিত।

পরিবারের বরাত দিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই দিন আগে সাদিয়ার বাবাকে খবর দিয়ে নেওয়া হয় রুবেলের বাড়িতে। এরপর মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এমনকি ওই বাড়িতে আবার আসতে হলে তিন লাখ টাকা দাবি করে রুবেল। এ কারণে ক্ষোভে সাদিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তার লেখা চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

/এএম/এসএইচএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে ঘুরে পড়ে আ.লীগ নেতার মৃত্যু
মাঠে ফিরেই হাল্যান্ডের গোলে জিতলো ম্যানসিটি
মাঠে ফিরেই হাল্যান্ডের গোলে জিতলো ম্যানসিটি
জাতীয় দল রেখে ঢাকা লিগে সাকিবের খেলার ব্যাখ্যা দিলেন নির্বাচক
জাতীয় দল রেখে ঢাকা লিগে সাকিবের খেলার ব্যাখ্যা দিলেন নির্বাচক
পাপন শুনেছেন, তামিম নাকি সামনের বছর ফিরবেন!
পাপন শুনেছেন, তামিম নাকি সামনের বছর ফিরবেন!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক