সমাজসেবার ছায়াতলে বরিশাল নগরীর রসুলপুর কলোনির বাসিন্দা শ্রমিক জামাল মিয়ার দুই শিশুকন্যা। আট বছরের আমেনা ও সাত বছরের মোহাইমিনা। এ দুই শিশুর আয় থেকেই চলছে ৬ সদস্যের সংসার। প্রতিদিন বেলস পার্ক মাঠে এ দুই শিশু ফুল বিক্রি করে।
তিন বোন, এক ভাই এবং বাবা-মা মিলে ছয় সদস্যের হাল আমেনা-মোহাইমিনার কাঁধে। বরিশাল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো বেলস পার্ক মাঠে হাঁটতে গেলে দেখা মেলে লাইটপোস্টের নিচে বসে দুই শিশু ফুল বিক্রি করছে। দেখেই মনে খটকা লাগে। এ বয়সে ফুল বিক্রি কেন? তাদের তো স্কুলে অথবা বাসায় থাকার কথা। আর শীতে দুই শিশু জবুথবু দিয়ে বসে ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মায়াবী তাকানো যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। তাদের দুজনের কাছে গিয়ে একাধিক প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, মা-বাবা ছাড়াও সংসারে তাদের চার ভাইবোন রয়েছে। এরপর সত্যতা যাচাইয়ে ছুটে যাই ওই পরিবারের খোঁজে। সেখানে গিয়ে ওই দুই শিশুর সকল উত্তরের সঙ্গে মিল খুঁজে পাই।’
তাদের মা জানান, তাদের বাবা মাঝেমধ্যে কাজ করেন। তবে বেশিরভাগ সময় কাজ করেন না। এক ছেলে আছে সে-ও বাবার মতো। এ কারণে দুই মেয়েকে দিয়ে ফুল বিক্রি করান। সেখান থেকে যা আয় হয় এবং তিনি বিভিন্ন স্থানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালিয়ে আসছেন।
তিনি আরও জানান, বাবা ও ছেলেকে বিষয়টি বারবার অবহিত করলেও তারা তাতে সামান্যতম কর্ণপাত করছে না। এ কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এখন মেয়েদের ফুল বিক্রি তাদের রোজগারের একমাত্র পথ।
সাজ্জাদ পারভেজ জানান, ওই সময় সমাজসেবা থেকে তাদের তেমন সহায়তা দিতে পারেননি। তবে তাদের স্কুল ফ্রেন্ডদের নিয়ে গড়ে তোলা ইভেন্ট-৮৪-এর পক্ষ থেকে শীতপোশাক এবং কম্বল দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দুই শিশুকে স্কুলে গিয়ে তাদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
লেখাপড়ার পাশাপাশি ওরা যাতে আয় করতে পারে সেজন্য নগরীর একটি পাইকারি ফুলের দোকানে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সকলের কাছ থেকে যে টাকা নেবে তাদের কাছ থেকে কম নিতে অনুরোধ করা হয়। এতে করে পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দুই শিশুকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় এনে প্রতিমাসে আর্থিক সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আর মেয়েদের বাবা ও ভাইকে কর্মক্ষম করার চেষ্টা চলছে। তাদের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করে দেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেওয়ার পর তা যদি তারা হজম করে ফেলে সেক্ষেত্রে সংসারে তা কোনও উপকারে আসবে না। সবদিক বিবেচনায় এনে শিশু দুটির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইভেন্ট-৮৪-এর পক্ষ থেকেও আর্থিক সহায়তা চালু থাকবে।’