‘কারাগারের বাইরের পরিবেশ আর ভবনের ভেতরের পরিবেশের মধ্যে বিশাল ফারাক। বাইরে গাছের বাতাসে ভালো থাকা গেলেও ভবনের ভেতরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা। তার ওপর ছোট কক্ষে ধারণক্ষমতার বেশি আসামি থাকায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি হয়। এছাড়া কক্ষের দুই মাথায় মাত্র দুইটি ফ্যান; যা কক্ষ ও আসামিদের তুলনায় পর্যাপ্ত না হওয়ায় কষ্টটা আরও বেড়ে যায়। বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের আসামিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে গরমের কষ্ট কারাগারে আটক থাকার চেয়ে বেশি নয় বলে জানান দুই আসামি। তারা বলেন, অপরাধ করেছি, সাজা পাচ্ছি। সেখানে ফ্যানের বাতাসের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ না। কবে জামিন পাবো সেই চিন্তায় থাকি।
ভেতরে গরমে অতিষ্ঠ হলেও কারাগারের অভ্যন্তরে অসংখ্য গাছ থাকায় বাইরের পরিবেশ ভালো বলে জানান একাধিক আসামি।
হাজিরার তারিখ থাকায় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১০টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামিদের আনা হয় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। পিকআপ ভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের নির্ধারিত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় কয়েকজন আসামির সঙ্গে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কারারক্ষী বলেন, সময় পাল্টেছে, এখন আর আসামিদের তেমন কষ্ট হয় না। কারণ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে ফ্যানসহ বিভিন্ন সামগ্রী অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়। এখন আসামিরা ভেতরে টেলিভিশন দেখতে পারেন। নিজেদের ইচ্ছামতো খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমন কোনও ব্যবস্থা নেই যা আসামি ও অভিযুক্তরা ভোগ করতে পারছেন না। তবে বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাদের কষ্ট করতে হয়।
তারা বলেন, কক্ষগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি আসামি রাখা হয়। একটি কক্ষে পাঁচ-ছয়টি ফ্যানের প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র দুই-তিনটি। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পর থেকেই আসামিদের প্রতি বেশি খেয়াল রাখছেন ঊধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সদস্যসচিব রফিকুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগার হলো আসামি ও অভিযুক্তদের নিরাপদ স্থান। সেই নিরাপদ স্থানে তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত আলো-বাতাস থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কনডেম সেল হলে পৃথক জিনিস। জেনেভা কনভেনশনের ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কারা অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসম্মত আলো-বাতাস নিশ্চিত করতে হবে। তা যদি না হয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায় পড়বে।’
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের অপরাধ সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির সদস্য প্রবেশন কর্মকর্তা ভবানী চন্দ্র পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারাগারে থাকা আসামিদের কোনও ধরনের সমস্যা হলে তা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে গরমে তাদের কতটুকু সমস্যা হচ্ছে তা জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী মাসে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কারাগার পরিদর্শনে যাবেন। তখন বিষয়টি খেয়াল করে আসামিদের গরমে সমস্যা হলে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’
এ বিষয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘এখানে আসামি ধারণক্ষমতা ৬৩৩ জন হলেও প্রতিদিন ৭৫০ থেকে ৮৫০ জন থাকেন। কারা আইন অনুযায়ী তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। তাছাড়া কারা অভ্যন্তর গাছ দিয়ে ঢাকা। সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস রয়েছে। এমনকি ভবনেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সবারই সমস্যা হচ্ছে।’