নারায়ণগঞ্জ থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী ও মিম শরৎ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহাগ মিয়াকে (৪২) হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পটুয়াখালী সদরের পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে স্থানীয় লোকজন সোহাগকে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের ভেতর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রাইভেটকারের ভেতরে হাত-পায়ের সঙ্গে চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় ছিলেন। সেইসঙ্গে গায়ের শার্ট রক্তে ভিজেছিল। সোহাগ মিয়া নারায়ণগঞ্জ সদরের নিউ চাষাঢ়ার জামতলা এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ফেরিঘাট এলাকায় সেতুর প্রকল্পসংলগ্ন স্থানে দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয়দের। প্রথমে ভেবেছিলেন গাড়িগুলো সেতুর কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু একপর্যায়ে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে হাতের ইশারায় তাদের ডাকেন এক ব্যক্তি। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে অনবরত হর্ন বাজানো হচ্ছিল। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি হাত-পা, চোখ ও মুখ বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এবং তার শরীর রক্তে ভেজা। তখন তারা পুলিশে খবর দেন। এরপর উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায় সোহাগ জানান, গত রবিবার রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত জোর করে তার গাড়িতে ওঠে। এরপর হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার অলিগলি ঘোরায়। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। সোমবার ভোরে তাকে পটুয়াখালী-মির্জাগঞ্জ রুটে পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাটে ফেলে যায় তারা। এরপর পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগের পরিবারের কাছে খবর পাঠালে তার স্ত্রী হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীতে আসেন। এরপর একটি জিডি করে স্বামীকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তারপর আমাদের কাছে আর কোনও তথ্য নেই। ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অপহরণের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তার চিকিৎসা প্রয়োজন ছিল। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি গাড়ি জব্দ করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট চালকরা পালিয়ে গেছে।’
নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির আহম্মেদ জানান, সোহাগ তার থানা এলাকায় ব্যবসা করেন। কিন্তু ফতুল্লা থানার সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে তিনি অপহরণ হন। তাই আইনগত সহায়তার বিষয়টি ফতুল্লা থানা পুলিশ দেখবে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অপহরণের খবর পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর রাত থেকে পুলিশ সোহাগ মিয়াকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করা হয় এবং পটুয়াখালী পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের তৎপরতায় অপহরণকারীরা বেকায়দায় পড়ে যায়। এ অবস্থায় সোমবার ভোরে পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট সংলগ্ন নির্মাণাধীন সেতুর বালুর মাঠে গাড়িসহ তাকে ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।