X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনিশ্চিত যাত্রার ২ বছর: পাল্টে গেছে রোহিঙ্গাদের জীবন

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
২৫ আগস্ট ২০১৯, ০২:৪৫আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০২:৪৫

 ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা হত্যা, ধর্ষণ, লুট এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেন। রবিবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গাদের সেই অনিশ্চিত যাত্রার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দুই বছরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অসহায় অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের আশ্রয়ে থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে তারা রাখাইনের সেই দুর্বিসহ জীবন ও যন্ত্রণার অনেকটাই ভুলে গেছেন।

তবে রোহিঙ্গারা ভালো থাকলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় হতাশ সরকার ও আন্তর্জাতিক মহল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে বর্তমানে ২০১৭ সালের সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সদস্যরাসহ নিবন্ধনকৃত ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪১৭জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা থেকে মেটে তাদের চাহিদা। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সেখানে ১০৪টির মতো দেশি-বিদেশি এনজিও ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

উখিয়ার বালুখালী-০২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী বৃদ্ধ রোহিঙ্গা ফয়েজুর রহমান বলেন, ‘রাখাইনের চেয়ে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে ভালো আছি। সেখানে সব সময় ভয় আর আতঙ্কে থাকতাম। এছাড়া স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা খুবই কষ্টকর ছিল। সব সময় সেনাবাহিনী অত্যাচার করতো। আর এখন দুই বছর ধরে বাংলাদেশে ভালো আছি। রেশনপাতি নিয়মিত পাচ্ছি, বউ-বাচ্চা নিয়ে চলছে জীবন।’

উখিয়ার টিভি টাওয়ারের পশ্চিমে বটতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-১ ব্লকের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের চেয়ে এখানে ভালো আছি। আপাতত আমি চিন্তামুক্ত। তবে আমাদের শর্তগুলো যদি মিয়ানমার সরকার মেনে নেয়, তাহলে মিয়ানমারে ফিরে যাবো। তবে আমার বিশ্বাস হয় না, যে তারা আমাদের ফিরিয়ে নেবে। যদি আমাদের ফিরেও নেওয়া হয়, তাহলে নাগরিকত্ব তো দূরের কথা, রাখাইনে ক্যাম্পের মধ্যেই বন্দি জীবন কাটাতে হবে।’

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ষাটোর্ধ্ব রোহিঙ্গা বৃদ্ধা নারী রমিজা খাতুন বলেন, ‘রাখাইনের জীবনের মতো এত ভয়াবহতা আর কখনও দেখিনি। মিয়ানমারের দুঃসহ স্মৃতি মনে হলে বাকি জীবনটা এই ঝুপড়ি ঘরে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এরপরও নিরাপদ পরিবেশ ও নাগরিকত্ব পেলে আমার দেশে ফিরে যাবো। কারণ, অন্তত কবরটি আমার দেশে পাবো। এতেই আমি খুশি।’

 এদিকে দুইবার প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক হলেও শেষ পর্যন্ত তা শুরু না হওয়ায় আদৌ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা। তবে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধে এনজিওদের প্ররোচণার অভিযোগ আসলেও ক্যাম্পে নিয়োজিত দাতা সংস্থা, এনজিও, রোহিঙ্গা নেতা এবং সরকারি সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অবশ্য, রোহিঙ্গারা বলছেন, নিরাপদ আশ্রয়, নিজের ভিটে বাড়ি ফিরে পেলে এবং নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলে তারা দ্রুতই ফিরে যাবে।

গত দুই বছরে বিশ্বের নানান দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল, আসিয়ান, ওআইসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদল একাধিকবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে। একইভাবে পরিদর্শনে আসেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। সর্বশেষ পরিদর্শনে আসেন মিয়ানমার সরকার কর্তৃক গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশন। কিন্তু, বিশ্বের ক্ষমতাবান আর বড় নেতাদের পরিদর্শনের পরেও প্রত্যাবাসনের আলো দেখেনি রোহিঙ্গারা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হোক আর না হোক, আমাদের চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাবো। রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি তুলে ধরবো, তাদের সঙ্গে মত বিনিময় অব্যাহত থাকবে। কারণ, প্রত্যাবাসন এটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখবো। হয়তো একদিন রোহিঙ্গারা বিষয়টি বুঝে এগিয়ে আসবে।’

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গত দুই বছর আগের অবস্থায় নেই এখন রোহিঙ্গারা। তাদের ভয়ার্ত ও অসহায় চেহারা ও চলাফেরা, আচার-আচরণ অনেকটাই পাল্টে গেছে। তারা ক্যাম্প এলাকার বাইরে অবাধে চলাফেরা করে। অনেকে এই সুযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া তাদের আচরণও দিন দিন উগ্র হয়ে উঠছে। কথায় কথায় তারা স্থানীয়দের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি কাউকে খুন করতেও নাকি তারা দ্বিধা করছে না। সম্প্রতি রোহিঙ্গা সদস্যদের হাতে এক যুবলীগ নেতা হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় এক রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যসময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
চকরিয়ার সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী বরখাস্ত
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস