সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চতুর্থ দফায় দ্বিতীয় দিনে তিন জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ নিয়ে ২০ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হলো।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আদালতে প্রথমে সাক্ষী হামজালালকে ওসি প্রদীপের আইনজীবীসহ তিন আসামির আইনজীবী জেরা করেন। এ ছাড়া সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা খান, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বারবিল গ্রামের গৃহবধূ বেবি বেগম এবং ছালেহ আহমেদ আদালতে জবানবন্দি দেন। আগামী তারিখে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বেবি বেগমকে জেরা করবেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় আদালত মুলতবি ঘোষণা করে আগামী ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান জানিয়েছেন, ওসি প্রদীপের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্রসফায়ার নিয়ে সংবাদ করায় তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ফরিদুল সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ওসি প্রদীপ ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে তুলে কক্সবাজারে নিয়ে যায় এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। পরে প্রদীপ তাকে টেকনাফ থানায় নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। তার চোখে মরিচের গুঁড়া ঢেলে থেঁতলে দেয়। ওই অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সমিতিপাড়ার বাসায় নিয়ে চার হাজার পিস ইয়াবা, অস্ত্র এবং বিদেশি মদের বোতল হাতে ধরিয়ে ছয়টি মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও বাধা দেয় ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনী।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বেবি বেগম বলেছেন, ওসি প্রদীপ তার বাড়িতে ইয়াবা তল্লাশির নামে স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। তাদের কাছে ৪০ লাখ টাকা দাবি করে। তারা ১৫ লাখ টাকা দিলেও ওসি প্রদীপ ছাড়েনি। তার মেয়েকে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। একপর্যায়ে মেয়েকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠায়। এসব বিষয়ে তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে বিচার দিতে গেলে ওসি প্রদীপ কৌশলে তাকেও গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। জেলখানায় মেয়ের সঙ্গে দেখা হলে নির্যাতনের কথা জানায় সে।
একই এলাকার দিনমজুর ছালেহ আহমেদও আদালতে জবানবন্দি দানকালে ওসি প্রদীপের ক্রসফায়ারের নানা কাহিনি তুলে ধরেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা কারাগার থেকে ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজন ভ্যানে আদালতে আনা হয়।
গত ২৩-২৫ আগস্ট মামলার প্রথম দফা সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সাহেদুল সিফাত। দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তৃতীয় দফায় তিন দিনে আট জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৯ জনকে আদালত নোটিশ দিয়েছেন। ২৩-২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে মামলার বাদী ও ২ নম্বর সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। তৃতীয় দফায় তিন দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় সিনহার লাশের ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকসহ আট প্রত্যক্ষদর্শীর। চতুর্থ দফায় সাত জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় ওই বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় র্যাবকে। ঘটনার ছয় দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা করে।