X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতি-মানুষের বিরোধ নিরসনে বসছে ‘সোলার ফেন্স’

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৭ এপ্রিল ২০২২, ০৮:০০আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩১

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির উপদ্রব অনেকাংশে বেড়েছে। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। বন্য হাতির পাল এসে আক্রমণ করছে মানুষের ঘরবাড়িতে। এছাড়া মাঝে মাঝে ঘটছে হাতির আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনা। সমস্যা সমাধানে সোলার ফেন্সিং সিস্টেম বসানোর কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ।

বন বিভাগ সূত্র বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে এশীয় ও আফ্রিকান প্রজাতির হাতির বিচরণ রয়েছে। বিশেষ করে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দুর্গম অঞ্চলে বন্য হাতির বিচরণ রয়েছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাবারের ওপর নির্ভরশীল এসব হাতি খাবারের সন্ধানে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ঘুরে বেড়ায়। বনে খাবারের অভাব এবং হাতির আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে হাতি প্রায়শই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে এলাকার মানুষ।

কাপ্তাইয়ের প্রশান্তি পার্ক, শিলছড়ি গেট, কামিলাছড়ি-আসামবস্তি সড়ক, রাইখালিসহ কয়েকটি এলাকার পাহাড়ে রয়েছে বন্য হাতির পাল। তবে আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় হাতি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। গত বছর কেবল কাপ্তাই উপজেলায় হাতির আক্রমণে মারা গেছে পাঁচ জন। বন বিভাগের তথ্য মতে, গত আট বছরে জেলায় বুনোহাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে ২০ জন। অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে মারা গেছে ছয়টি হাতি।

হাতি-মানুষের বিরোধ নিরসনে বসছে ‘সোলার ফেন্স’ কাপ্তাই উপজেলায় রিজার্ভ ফরেস্টে বাস করে অন্তত ৪০টি বুনোহাতি। শুধু কাপ্তাই নয়; জেলার লংগদু, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি উপজেলাতেও এখন বন্য হাতির আতঙ্ক জনমনে। মার্চ থেকে জুলাই এই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ে প্রাকৃতিক খাবার, ঝিরি-ঝরনা শুকিয়ে যাওয়ায় বন্য হাতির খাবার ও পানির সংকট দেখা দেয়। এতে হাতির পাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে। আর যাত্রাপথেই মানুষেরও মুখোমুখি হচ্ছে হাতি। আর এতে আতঙ্কে দিন কাটে এলাকাবাসীর। পরিবেশবাদীদের মতে, পাহাড়ে খাবারের সমস্যা সামাধান না করলে হাতিকে পাহাড়ে আটকে রাখা কঠিন।

হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাপ্তাইয়ের নৌবাহিনী সড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায়, হাতি চলাচলের পথে সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক ও বনবিভাগের সদস্যরা। কাপ্তাই বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮ কিলোমিটার জুড়ে চলছে এই ফেন্সিং নির্মাণ কাজ। যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সোলার ফেন্সিং সিস্টেম সম্পর্কে আরও জানা যায়, এটি এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যার দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চেষ্টা করতে চাইলে সোলার ফেন্সিংয়ের হালকা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে চলে যাবে, তবে এতে বন্য হাতির প্রাণহানি ঘটবে না।

কাপ্তাইয়ে সোলার ফেন্সিং নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আকাশ জানান, এই সোলার ফেন্স নির্মাণে ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৮শ’টি পিলার নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পিলার মাটির নিচে তিন ফুট এবং উপরে সাত ফুটসহ মোট ১০ ফুট উচ্চতার। বর্তমানে প্রায় ৫০টি পিলারের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। বাকি পিলারগুলোর কাজ চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

হাতি-মানুষের বিরোধ নিরসনে বসছে ‘সোলার ফেন্স’ পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, ‘পাহাড়ে দিন দিন হাতির খাবারের সংকট চরম আকার দেখা দিয়েছে। আর মানুষও হাতির আবাসস্থল ধংস করে ফেলছে। শুষ্ক মৌসুম এলে হাতি খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসে। তখনই হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’

হাতির খাবার সংকট নিরসন করা না গেলে ফেন্সিং পদ্ধতি চালু করেও সমাধান মিলবে না বলে মত পরিবেশবাদী এই সংগঠকের।

কাপ্তাই বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার মাহমুদুল হক জানান, প্রাকৃতিক বন ও জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই কাপ্তাই। কাপ্তাইয়ের গভীর জঙ্গলে রয়েছে বেশ কয়েকটি বন্য হাতির পাল। অনেক সময় খাবার না পেয়ে তারা লোকালয়ে চলে আসে। মানুষের ঘরবাড়ির ক্ষতিসাধন করে। তাই বনবিভাগের উদ্যোগে বন্য হাতির খাবার বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, হাতি-মানুষ বিরোধ নিরসনে এই সোলার ফেন্সিং নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে বন্য হাতি লোকালয়ে আসার প্রবণতা অনেকটা কমবে বলে তিনি মনে করেন।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান জানান, ইতোমধ্যে কাপ্তাইয়ে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সোলার ফেন্স নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে এই সোলার ফেন্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করেন।

/ইউএস/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?