X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ব্রাজিলিয়ান তরুণীকে বিয়ে করে প্রতারিত হইনি’

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
২৬ জুলাই ২০২২, ২১:৪৬আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ২২:৩৯

কুমিল্লার লাকসামের ছেলে আবদুর রব হিরু। উপজেলার দোগাইয়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছোট ছেলে তিনি। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিয়ে করেন প্রেমের টানে ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আসা তরুণী জিউলিয়ানা জিওর্জিয়ানিকে। বিয়ের কয়েক দিন পরই স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান ব্রাজিলে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে দুজন মানুষ এখন কেমন আছেন? বিদেশি তরুণীকে বিয়ে করে সামাজিক প্রতিক্রিয়া কি পেয়েছেন এবং তার পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবনে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছেন কিনা, এসব বিষয় জানিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনকে। 

জিউলিয়ানার সঙ্গে পরিচয় এবং ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে হিরু বলেন, আমি সিলেটের মদন মোহন কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষবর্ষে পড়ার সময় ২০১০ সালে জীবিকার তাগিদে বাহরাইনে চলে যাই। সেখানে থাকা অবস্থায় আমাদের ফেসবুকে একটি ইংরেজি প্র্যাকটিস গ্রুপ ছিল। গ্রুপে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা যুক্ত ছিলেন। সেখানেই আমাদের পরিচয়। এরপর আমরা শুধু কথাই বলতাম। ২০১২ সালের শেষ দিকে আমাদের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। কিন্তু আমরা নিজেদের ভালোবাসি তা বললেও কখনও ভাবিনি আমরা বিয়ে করবো। কারণ, এটা একরকম অসম্ভব বিষয় ছিল। এভাবে প্রায় ছয় বছর আমাদের শুধু কথা হয়েছে। তারপর ২০১৮ সালে সে তার বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসে। রাজধানীর কাকরাইল এলাকার একটি কাজী অফিসে গেলে জিউলিয়ানা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং আমরা পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি।

বিয়ের পর ব্রাজিলে যাওয়ার বিষয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে জানিয়ে হিরু বলেন, আমাদের বিয়ের পর এক মজার ঘটনা ঘটে। যখন জিউলিয়ানা ও তার বাবা মারকোস জিওর্জিয়ানি বাংলাদেশে আসে তখন আমিও বাহরাইন থেকে বাংলাদেশে এসেছি। বিয়ের আগে আমি ব্রাজিল যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সব ঠিকঠাক থাকার পরও অ্যাম্বেসি আমাকে ভিসা দেয়নি। এরপর আমি তাকে বললাম আমাকে ভিসা দেয়নি, তুমি কিছু করো। এতদিনে সে বাংলাদেশে আসার জন্য তার সব কাগজপত্র রেডি করে ফেলেছে। হঠাৎ আমাকে কল দিয়ে জানায় তার বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। পরে পরিবারসহ গিয়ে তাকে রিসিভ করি। বিয়ের পর পড়লাম সবচেয়ে বড় সমস্যায়। আমাকে ব্রাজিলে যাওয়ার ভিসা দিচ্ছিল না। তারপর আমি শ্বশুরকে বিষয়টা জানাই। তিনি বলেন, টেনশন করো না আমি দেখবো। বিয়ের কয়েক দিন পর আমি জিউলিয়ানা ও তার বাবাকে নিয়ে অ্যাম্বেসিতে যাই। 

অ্যাম্বেসিতে ব্রাজিলিয়ান লোককে দেখে তারা এত সুন্দর আপ্যায়ন করলো, যা দেখে আমি রীতিমতো অবাক। পরে আমার শ্বশুর ব্রাজিলিয়ান অ্যাম্বাসেডরকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আমাদের ভালোবাসার পুরো গল্প শোনালেন। গল্প শুনেই অ্যাম্বাসেডর আমাকে অভিনন্দন জানান। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন সব কাগজপত্র এনেছি কিনা। আমি হ্যাঁ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেগুলো চাইলেন। আমি সব বের করে দেওয়ার পর তিনি তার সহযোগীকে ডেকে বললেন যত দ্রুত সম্ভব যেন কাগজপত্র করে দেওয়া হয়। আমরা অ্যাম্বেসিতে থাকাকালেই সব ব্যবস্থা হয়ে যায়। সেখানেই আমি ব্রাজিল যাওয়ার অনুমতি পাই। বিয়ের দু'সপ্তাহের মধ্যেই আমি, জিউলিয়ানা ও তার বাবা ব্রাজিল চলে যাই। 

বিয়ের পর পরিবারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জিউলিয়ানাকে বিয়ে নিয়ে পরিবার প্রথম দিকে নারাজ ছিল। এমনকি তারা যেদিন দেশে এসেছে সেদিনও আমার পরিবার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু যখন সে এসে সবাইকে জড়িয়ে ধরলো, কথা বললো এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটালো, তখন সবাই জিউলিয়ানাকে আপন করে নেয়। 

 সম্পর্ক এবং বিয়ের বিষয়টি প্রতিবেশীরা কেমনভাবে নিয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, সমাজ বা প্রতিবেশীরা কেমনভাবে বিষয়টি নিয়েছে, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। তারপরেও মানুষ কেমন জানি একটু ভিন্ন চোখে দেখতো। বিদেশি তরুণী বিয়ে করা তেমন কোনও ভিন্ন বিষয় নয়। আমি চাই, সবাই আমাদের অন্য সব দম্পতির মতোই দেখুক।

জিউলিয়ানার সঙ্গে দাম্পত্য জীবন কেমন চলছে জানতে চাইলে হিরু বলেন, স্ত্রীসহ এখন আমি জার্মানিতে আছি। ২০১৮ সালে ব্রাজিল যাওয়ার পর সেখানে ছয় মাস অবস্থান করি। সেখান থেকে চলে যাই পর্তুগাল। পর্তুগালে দেড় বছর থাকার পর চলে আসি জার্মানি। জার্মানির ফ্র্যাংকফুট শহরে আছি। এখানে একটি রেস্টুরেন্টে কুক হিসেবে কাজ করছি। আর স্ত্রী জিউলিয়ানা এ দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোসায়েন্সে পিএইচডি করছেন। তার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ই বহন করছে। 

বিদেশি তরুণীকে বিয়ে করার পর জীবন কেমন চলছে, জানতে চাইলে হিরু বলেন, জিউলিয়ানাকে বিয়ে করে প্রতারিত হইনি। আমি তার সঙ্গে প্রেম করেছি প্রায় ছয় বছর। এই ছয় বছরে তাকে একবারও সরাসরি দেখিনি। সেও আমাকে দেখেনি। তারপর বিয়ে করেছি আজ প্রায় চার বছর। সব সংসারে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হয়, সেগুলো ভালোবাসারই অংশ। আমাদেরও ভিন্ন নয়। আমার মা নেই। যখন ছিলেন, তখন মায়ের সঙ্গে জিউলিয়ানা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। এখন আমার বাবার সঙ্গে কথা বলে। তবে বেশি কথা বলতে পারে না। মাঝে মধ্যে কথা বলতে গিয়ে আটকে যায়। পরে আমি বলে দেই। 

দেশে ফিরবেন নাকি প্রবাসেই কাটবে জীবন, জানতে চাইলে কুমিল্লার ছেলে হিরু বলেন, সবারই মাতৃভূমির প্রতি টান কাজ করে, আমারও আছে। সুযোগ পেলেই জিউলিয়ানাকে নিয়ে দেশে চলে আসবো। দেশেই কাটাবো বাকি জীবন।

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভূমিকম্পে কুমিল্লার মসজিদে ফাটল
‘সংবিধান মানবেন না, জ্বালাও-পোড়াও করবেন, মানুষ তা মেনে নেবে না’
গাঁজা সেবনে বাধা দেওয়ায় ইউনিয়নের মেম্বারকে হত্যার অভিযোগ 
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা