X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ে এবার স্বস্তির উৎসব

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
০৬ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫১আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০২:৫১

মহা দশমীর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দিতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন লাখো দেবী ভক্ত। তবে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের দেবীকে বিসর্জন দিতে আসাদের অশ্রুতে ছিল স্বস্তির আবেশ। গত বছর দুর্গাপূজায় এই মণ্ডপেই পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী তুলকালাম ঘটনা ঘটেছিল। সেই কথা স্মরণ করেই কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বললেন, ‘মাকে বিসর্জন দেওয়া শোকের। মা নিরাপদে মর্ত্যে আসেন, তাকে নিরাপদে আবার যখন আমরা বিসর্জন দিতে পারি; তখন সেই শোকও সুখের হয়।’

বুধবার (৫ অক্টোবর) দশমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপের পাশে অচিন্ত্য দাসের মতো সবাই ছিলেন স্বস্তিতে। মাকে বিসর্জন দেওয়ার শোকের সঙ্গে তাদের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস-আনন্দাশ্রু। গতবছরের শোককে কাটিয়ে এবার সুন্দর ও নিরাপদে দেবীকে বিসর্জন দিতে পেরে খুশি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

এর আগে কুমিল্লা নগরীর কাত্যায়নী কালীবাড়ি, চাঁনমনি মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির, শ্রীবল্লভপুর মন্দির, রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরের পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, হাতে অপরাজিতা বেঁধে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছেন সব বয়সের নারী ও শিশুরা। প্রিয়জনদের গালে সিঁধুর মেখে আনন্দ করছেন।

সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ে এবার স্বস্তির উৎসব

অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। গত বছর আমাদের পূজা ছিল শোকের। গতবছর এই উৎসবে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। মাকে আমরা ভালোভাবে বিদায় দিতে পারিনি। অষ্টমীর দিনে বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে মাকে কোনোমতে বিদায় দিয়েছি। বছর ঘুরে মা আবার আমাদের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছেন। মায়ের এই আগমন এবার খুবই আনন্দের হয়েছে। আর মার বিদায়ও খুশিতেই হচ্ছে। গতবছর আমাদের অনেক ভাই মারা গেছেন। এবার সবার সহযোগিতায় আমরা একটা সুন্দর পূজা শেষ করেছি।’

এবার পূজা উৎসবে কোনও অস্বস্তি ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের মা যেদিন চলে যান, সেদিনটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যেহেতু এবার আমরা কোনও ঝামেলা ছাড়াই মাকে বিসর্জন দিতে পারছি, তাই আমরা শোকের মধ্যেও স্বস্তিতে আছি।’

গত ৩০ বছর ধরে নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে দেবীর আগমন ও বিসর্জন দেখে আসছেন আঁখি রানী দাস (৩৩)। তিনি বলেন, ‘ছোট থেকে বড় হয়েছি এই মণ্ডপে পূজা করে। ভাগ্যক্রমে শ্বশুর বাড়িও এখানেই পড়েছে। তাই এই মণ্ডপেই আমরা পূজা করি। আগের বার যা ঘটেছে, তা আমি আমার এই বয়সে আর কখনোই দেখিনি। আমরা চাই না আর এমনভাবে মায়ের বিদায় হোক। তাই গত বছরের ঘটনাকে আমরা আর মনে করতে চাই না। আর কোনও ধর্মের মানুষর যেন এমন হামলার শিকার না হয়, এটাই চাই।’

৫ থেকে ৭ বছর ধরে এই মণ্ডপে আসছেন সেমা রানী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে এই এলাকায়। তাই এখানে পূজা দিতে আসি। গত বছর এই দিনে আমি ঘর থেকে বের হতে পারিনি। এবার পূজা দিতে এসেছি। এ দেশে নিশ্চয়ই ভালো মানুষ আছেন। তাই আমরা শান্তিতে পূজা দিতে পারছি।’

সেই নানুয়ার দিঘির পাড়ে এবার স্বস্তির উৎসব

সুমন দেবনাথ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ভয়ে ছিলাম, এটা সত্যি। কিন্তু না এবার আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে দেশের প্রশাসন ও সবাই। আমরা চাই শান্তি। আমরা ধর্মের পরিচয়ে নয়। মানুষ পরিচয়ে ভাই ভাই হয়ে এই শান্তির দেশে থাকতে চাই।’

এ বছর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ পুরো জেলায় ৭৯৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল নাগাদ শহরের প্রায় সব মণ্ডপের দেবী বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। তবে নানুয়ার দিঘিরতে পাড়ের অস্থায়ী পূজা মণ্ডপের দেবীকে রাত ৯টায় বিসর্জন দেওয়া হয় জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ওয়াক্তের নামাজ রয়েছে। তাই নামাজের বিরতি দিয়ে দিয়ে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে বিসর্জন দিতে আসেন দেবী ভক্তরা। সেকারণেই নানুয়ার দিঘির মণ্ডপের দেবীর বিসর্জন হয় রাত ৯টায়। 

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূজার শুরু থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি। বিশেষ করে গভীর রাতে টহল বাড়িয়েছি। উপজেলা থেকে জেলা ও নগরীর সব মণ্ডপে প্রশাসনের শক্ত অবস্থান ছিল। আমরা সকল মণ্ডপে পুলিশ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর মোবাইল নম্বর দিয়েছি। আমাকে একাধিক স্থান থেকে অনিরাপদ বোধ করে রাত ৩টায়ও কল দিয়েছে। আমি তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়েছি। এতে কোনও নেতিবাচক ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই সবাই শান্তিতে ধর্ম পালন করুক।’

প্রসঙ্গত, গত বছর ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে দেশের রংপুর, চাঁদপুর, সিলেট, কিশোরগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নিহত হন পাঁচ জন। মামলা হয়েছে অন্তত ৭২টি। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার পাঁচ শতাধিক।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
পূজার সময় গুরুতর আহত ৩ জন সুস্থ আছেন: মিটফোর্ড পরিচালক
বিএনপির সরকারের সময় মন্দিরে পাহারা লাগতো না: মির্জা আব্বাস
গোপালগঞ্জের শতাধিক স্থানে বসেছে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট
সর্বশেষ খবর
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
গাজাবাসীর নিরাপত্তাই ট্রাম্পের প্রধান চাওয়া
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল