সারা দেশে মিনিকেট চাল নামে যা খাওয়ানো হচ্ছে তার পুরোটাই ধোঁকা। মূলত মোটা চালকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে আকৃতি ছোট করা হয়। তারপর মিনিকেট বলে বিক্রি করা হয়। তবে এবার কুমিল্লায় নতুন জাতের চিকন ধান চাষ করা হয়েছে। এই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর নাম বিনা ধান-২৫।
এই ধানের চাল চিকন হওয়ায় এটিকে ‘মিনিকেট’ বলছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা বলছেন, এই ধানের চাল মিনিকেটের মতো চিকন। স্বাদ ভালো। এর দাম তুলনামূলক ভালো হওয়ায় এই ধান চাষে ঝুঁকছেন তারা।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ধানের চাল চিকন হওয়ায় এটিকে মিনিকেট বলা যায়।’
কান্দারঘোড়া এলাকার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে বিনা ধান-২৫। এরই মধ্যে কৃষকরা এই ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা ও বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, বাজারে মিনিকেট বলে চিকন চাল দেখা যায়। এটি মূলত মোটা চাল কেটে চিকন করা হয়। এতে পুষ্টিবঞ্চিত হন ক্রেতারা। তবে বিনা ধান-২৫-এর চাল মিনিকেটের মতো চিকন ও লম্বা। এবার কুমিল্লার ১৭ উপজেলার ১৮ হেক্টর জমিতে প্রথম এই জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে অন্য ধান থেকে এর ফলন ভালো হয়েছে। সার ও সেচ কম লাগে। জীবনকালও কম। দাম বেশি হওয়ায় এই ধান চাষে আগ্রহ দেখিয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া এই ধানের রোগ-বালাইও কম।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কুন্দারঘোড়া গ্রামের কৃষক আবুবকর শিবলী ও আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর বিভিন্ন ধানে ব্লাস্ট রোগ হয়েছিল। এ জন্য এবার বিনা ধান-২৫ চাষ করেছেন তারা। রোগবালাই হয়নি। ভালো ফলন পেয়েছেন। চিকন ধান নিজেরা খেতে চেয়েছেন। ফলন ভালো দেখে অন্য কৃষকরা বীজ চাচ্ছেন। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে এই ধান চাষ করবেন বলে জানালেন তারা।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা খাতুন বলেন, ‘২৮ ও ২৯ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে পাঁচ-ছয় টন হতো। এবার বিনা ধান-২৫ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয়েছে সাড়ে সাত টন। বাম্পার ফলন দেখে খুশি আমার ব্লকের কৃষকরা।’
বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগে বোরো মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত ছিলেন। বিনা-২৫ নতুন জাতের ধান। এবার প্রথম কুমিল্লার মাঠে চাষ হয়েছে। দেখা গেছে ব্লাস্ট আক্রমণ করেনি। কম সময়ে, কম সেচ ও সারে বাম্পার ফলন হয়েছে।’
এবার কুমিল্লায় ১৮ হেক্টর জমিতে প্রথম এই জাতের ধান চাষ হয়েছে বলে জানালেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটির ফলন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। এটির গাছ শক্ত হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহনশীল। এটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান। যা বিদেশে রফতানি করা যাবে। গাছ লম্বা হওয়ায় এটি থেকে কৃষক বেশি খড় পাচ্ছেন। ফলন ভালো পেয়ে খুশি কৃষকরা।’