চট্টগ্রামে গ্যাস সংযোগ পাবেন না আবেদনের ৮ থেকে ১০ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা ২২ হাজার আবাসিকের গ্রাহক। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম।
আজ এই কর্মকর্তার কেজিডিসিএলে শেষ কর্মদিবস ছিল। তাকে কেজিডিসিএল থেকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে আবাসিক বাসা-বাড়িতে গ্যাস-সংযোগ পাওয়ার জন্য প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক আবেদন করেন। তবে তারা গ্যাস সংযোগ পাবেন না। বর্তমানে আবাসিক এবং বাণিজ্যিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শুধু চালু আছে- শিল্পে গ্যাস সংযোগ। ইতোমধ্যে যেসব গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তারা চাইলে আবেদন করে জমা দেওয়া টাকা ফেরত নিতে পারেন।’
নজরুল ইসলাম নামে রাউজান পাহাড়তলী ইউনিয়নের এক গ্রাহক বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালে বাড়িতে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করি। ওই সময় গ্যাস সংযোগ চালু ছিল। পরে শোনা যায় আবাসিকে নাকি গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনও সার্কুলার দেওয়া হয়নি। অথচ আমরা গ্যাস সংযোগ পাওয়ার বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছি। এ দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে কেজিডিসিএল কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ তথা মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছি। আমরা গ্যাস সংযোগ চাই।’
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইকরাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিন বছরে প্রায় ২২ হাজারের বেশি গ্রাহক গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করে। এসব আবেদন বাবদ গ্রাহকরা জমা দিয়েছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের পর থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রেখেছে কেজিডিসিএল। এ কারণে এসব আবেদন আটকা পড়ে। গ্রাহকরা টাকা ফেরত নিচ্ছেন না। গ্যাস দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। তবে এ ২২ হাজার গ্রাহক গ্যাস সংযোগ পেতে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।’
হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা নুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৯ বছর আগে ২০১৪ সালে নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। এখনও সংযোগ পাওয়া যায়নি। কবে পাব সে বিষয়েও কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলছেন না। এখন বলছেন টাকা ফেরত নিতে। টাকা ফেরত দিলে আবেদন গ্রহণ করল কেন?’
এ আবেদনকারী বলেন, ‘মূল লাইন থেকে সংযোগ অনুযায়ী দূরত্ব হিসাব করে প্রথম তিন মিটার বাদে পরবর্তী প্রতি মিটার পাইপের জন্য এক হাজার ৬০ টাকা হিসাবে ডিমান্ড নোটের সঙ্গে জমা দিতে হয়েছে। এতে একেকটি আবেদনের জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কিংবা আরও বেশি টাকা জমা দিতে হয়েছে। অফিসিয়াল সব কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ ৯ বছরেও গ্যাসের নতুন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।’
ডিমান্ড নোটের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিকে জামানত ও ফির মাধ্যমে গ্যাস-সংযোগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে রিট করা হয়। চট্টগ্রাম গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির গ্রাহক ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আলমগীর নূর, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম অলি উল্লাহ হক ও মো. নুরুল আলম নামের এক আবেদনকারী রিটটি করেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির গ্রাহক ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আলমগীর নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রহস্যজনক কারণে ২০১৫ সাল থেকে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা অন্যায়। আবাসিকে গ্যাস সংযোগ যে দেওয়া হবে না সেটার কোনও প্রজ্ঞাপন কিংবা কোনও ধরনের সার্কুলার সরকার এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। অথচ এর আগে অন্তত ২২ হাজার গ্রাহক কেজিডিসিএলে সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। তারা আবেদন বাবদ জমা দিয়েছিল ২৫ কোটি টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোতল গ্যাস বা এলপি গ্যাসের বিক্রি বাড়াতে সরকার আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রেখেছে। বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতাচ্ছে কেজিডিসিএলের কতিপয় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। সারা দেশে হিসেব করলে আবাসিকে মাত্র ৫-৭ শতাংশ গ্যাস যাচ্ছে।’
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডকে পুনর্বিন্যাস করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে এ কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকাগুলো হলো- চট্টগ্রাম নগরী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই। এসব এলাকায় মোট সংযোগ রয়েছে ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালিতে সংযোগ আছে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যিকসহ অন্যান্য খাতে। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা আছে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।