চট্টগ্রামে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচিতে ৯টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে এসব ঘটনায় কেউ গুরুতর হতাহত হয়নি। প্রতিটি ঘটনায় পৃথকভাবে থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকে সড়ক, রেল ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। চলে বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত। অবরোধের সময়ে চট্টগ্রামের সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল কম। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। ফলে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তিন দিনের অবরোধে রেল ও নৌপথে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও সড়কপথে ঘটেছে একাধিক ঘটনা। অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ব্যারিকেড দেওয়ার পাশাপাশি পিকেটিং করেছেন অবরোধ সমর্থকরা। এতে একাধিক গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি ৯টিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সবচেয়ে বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এই উপজেলার কাপ্তাই সড়কে একটি বাস, দুটি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবরোধের আগের দিন সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে নগরীর খুলশী থানার জিইসি মোড়ের কে স্কয়ারের সামনে বরযাত্রীবাহী একটি মিনিবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৪টায় ট্যানারি বটতল এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিন সকাল ৬টায় ইপিজেড থানার সলগোলা ক্রসিং এলাকায় আরও একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
বুধবার (০১ নভেম্বর) ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের চৌধুরী গোট্টা এলাকায় পাথরবোঝাই দুটি ট্রাক এবং একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিন সকালে কর্ণফুলী উপজেলায় পোশাকশ্রমিকদের বহন করা একটি বাস ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়। দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে রডবোঝাই লরিতে আগুন দেওয়া হয়। রড নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল গাড়িটি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকায় পার্কিংয়ে থাকা এ বি ট্রাভেলসের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং একই পরিবহনের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সমিতির অধীনে বিভিন্ন সড়কে অন্তত আড়াই শতাধিক গণপরিবহন চলাচল করে। হরতাল ও অবরোধে আমরা গাড়ি চালিয়েছি। তবে আমাদের সমিতির কোনও গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন দিনের অবরোধে আমাদের দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে একটি জিইসি মোড়ে, আরেকটি ইপিজেড থানার সলগোলা ক্রসিং এলাকায়। বিষয়টি সরকারের দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি আমরা।’
তিন দিনের অবরোধে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন নগরীর কোতোয়ালি থানার ওসি জাহিদুল কবির। তিনি বলেন, ‘বুধবার অবরোধের সমর্থনে ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিকদলের কয়েকজন সড়কে পিকেটিং করার চেষ্টা করেছিল। সে সময় দুটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেছে তারা। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে একজনকে গ্রেফতার করেছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পেট্রল বোমা ও ককটেল উদ্ধার করা হয়।’
সীতাকুণ্ড থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কে লরি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের তৎপরতার কারণে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি কমেছে। যারা লরিতে আগুন দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’