কক্সবাজারে উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার শীর্ষ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (১০ জুন) দুপুরে কক্সবাজার র্যাব-১৫ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন। এর আগে রবিবার রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন উখিয়ার ক্যাম্প-৫-এর বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম ওরফে মৌলভী অলি আকিজ (৫০), ক্যাম্প-৬-এর মাস্টার ফয়সাল (২৮), ক্যাম্প-২০-এর ফয়জুর রহমান (২৪), ক্যাম্প-৮-এর সালাম ওরফে মাস্টার সালাম (২০) এবং ক্যাম্প-২২-এর মো. জুবায়ের (২৪)।
র্যাবের দাবি, অলি আকিজ রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যা এবং ক্যাম্পে সেভেন মার্ডারের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও অপহরণসহ ২১টি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় আরসার শীর্ষ নেতা অলি আকিজ দীর্ঘদিন মিয়ানমারে আত্মগোপনে থাকলেও গত ১৯ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরেছেন। আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি এবং সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। রবিবার মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প-৪-এ গোপন বৈঠক থেকে আকিজসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশিয় তৈরি এলজি, একটি ওয়ানশুটার গান, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, দুই কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য, তিনটি মোবাইল এবং নগদ দুই হাজার ৫০০ জব্দ করা হয়।’
তাদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অলি আকিজ জানান ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসে ক্যাম্প-৫-এ সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। পরে আরসার হয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর ক্যাম্প-৫-এ আরসা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। নেটওয়ার্ক গ্রুপে কাজ করতেন। ক্যাম্পের বিভিন্ন তথ্য আরসা কমান্ডারদের কাছে পৌঁছে দিতেন। এভাবে শীর্ষ নেতৃত্বে পৌঁছান। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ওস্তাদ খালেদের নির্দেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তাছাড়া মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে ক্যাম্পে সেভেন মার্ডারে সরাসরি অংশ নেন। ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় জড়িত ছিলেন আকিজ।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় ১৩টি হত্যা, একটি অস্ত্র, দুটি অপহরণ, দুটি হামলা, একটি ডাকাতি এবং বিস্ফোরক আইনেরসহ ২১টি মামলা রয়েছে। তার সঙ্গে গ্রেফতার সবাই আরসার হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ করে আসছিলেন। নতুন করে মামলা দিয়ে তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’