চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বাণিজ্যিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে টোল আদায়ের কার্যক্রম সকালে উদ্বোধন করবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাণিজ্যিকভাবে যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করা হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তন করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণ করা হয়েছে।’
এর আগে এটির নামকরণ করা হয়েছিল চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে।
সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার থেকে বাণিজ্যিকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শুরুতে শুধু এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হবে। প্রথমে সিডিএ টোল আদায় করবে। পরে ঠিকাদারের মাধ্যমে এ টোল আদায় করা হবে।’
গত ২৮ আগস্ট থেকে এক্সপ্রেসওয়ে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যানবাহন থেকে কোনও টোল আদায় করা হচ্ছে না।
সিডিএ সূত্র জানিয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলবে ১০ ধরনের যানবাহন। তবে চলবে না মোটরসাইকেল ও টেইলার গাড়ি। এর মধ্যে প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (চার চাকা) ২০০, ট্রাক (ছয় চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৫০০ ও অটোরিকশা ৩০ টাকা করে টোল দিতে হবে।
সিডিএ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরমুখী এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে তা ১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। প্রাথমিক সমীক্ষায় ২০টি র্যাম্প (যানবাহন ওঠানামার পথ) নির্মাণ করার কথা থাকলেও করা হয়েছে ১৪টি। এর থেকে আরও পাঁচটি অপ্রয়োজনীয় র্যাম্প বাদ দিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৯টি র্যাম্প দিয়ে যানবাহন ওঠানামা করবে। র্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আছে মাত্র অর্ধেক। সিডিএ’র প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান র্যাংকিন।
এক্সপ্রেসওয়ে চালুর কথা ছিল ২০২০ সালের জুনে। পরে তা পরিবর্তন করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার সময় তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন হলেও ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২২ সালে নকশা সংশোধন করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।