কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। রবিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিহত সেলিম ভূঁইয়ার বড় ভাই আব্দুর রহিম বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় এ হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় যুবদলের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে ৭৯ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া (৫০) উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও দায়েমছাতী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
মামলায় অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক নির্বাহী সদস্য কামাল হোসেন মজুমদার, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মহিন প্রকাশ, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম, সদস্যসচিব কামরুজ্জামান টিটু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোদাচ্ছের হোসেন লিটন, আবদুল মমিন, পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক নুরুল আফসার সজল, সদস্যসচিব কামাল হোসেন, পৌরসভা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রদলের নেতা আলী হোসেন টিপু, কিনারা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, বাঙ্গড্ডা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন, শাহ নেওয়াজ, উপজেলা যুবদলের সদস্য ফারুক হোসেন কুতুব, ফারুক মোল্লা, নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ কমিশনার, বাঙ্গড্ডা গ্রামের সোহাগ, জহির, বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সদস্যসচিব আব্দুল মতিন, সাবেক আহ্বায়ক শাহ আলম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, পৌরসভা ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ পারভেজ, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ, হরিপুর গ্রামের পারভেজ, জামাল হোসেন, উপজেলা যুবদলের সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন, পৌরসভা যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ ডলি, বেতাগাঁও গ্রামের ইকবাল, পৌরসভা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সেলিম, বেতাগাঁও গ্রামের আলমগীর, মাধবপুর গ্রামের আনোয়ার মাহমুদ মিলন, শালুকিয়া গ্রামের রাসেল মাহমুদ, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম সুজন, উপজেলা যুবদল সদস্য মোবারক হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ জন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকাল ৩টায় বাঙ্গড্ডা বাদশা মিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। একই সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নে একটি অনুষ্ঠান শেষে পেরিয়া ইউনিয়নে আরেক অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। আব্দুল গফুরের সমর্থকরা গাড়িবহর নিয়ে বাঙ্গড্ডা বাজার অতিক্রম করছিলেন। এ সময় মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া সমর্থিত নেতাকর্মীরা পেছন থেকে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন গফুর ভূঁইয়ার অনুসারীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেইসঙ্গে পাঁচ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া কিছুই জানেন না দাবি করলেও বিএনপির অপর পক্ষের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, ‘কাকৈরতলায় আমার সমাবেশে যাওয়ার পথে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সেলিম ভূঁইয়া নিহত হন।’
পুলিশ জানায়, হত্যার ঘটনায় শনিবার রাতে যুবদলের তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- উপজেলার বটতলী ইউনিয়ন যুবদলের নেতা ফারুক হোসেন, নাঙ্গলকোট পৌরসভার গোত্রশাল গ্রামের আফসার উদ্দিন ও একই গ্রামের মোহাম্মদ হেলাল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সংঘর্ষের ঘটনায় সম্পৃক্ততা পাওয়ায় রবিবার বিকালে তাদের কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের ভাই আব্দুর রহিম বলেন, ‘রবিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিকাল ৩টায় স্থানীয় দায়েমছাতি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওসি এ কে ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সেলিম ভূঁইয়া নিহতের ঘটনায় রবিবার দুপুরে ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন তার ভাই আব্দুর রহিম। এর মধ্যে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’