X
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২

১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, আসামি ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ ৪৬ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৭আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৯

গ্রাহকের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) চেয়ারম্যান মো. শওকত আলি চৌধুরী প্রকাশ ডিসকো শওকত এবং ব্যাংকটির কর্মকর্তাসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন মো. মুর্তজা আলী নামে এক ব্যবসায়ী।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী মো. মুর্তজা আলী একজন ব্যবসায়ী এবং ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার, পরিচালক এম গাজিউল হক, সেলিনা আলি, আনিস আহমেদ, মুফাক্কারুল ইসলাম খসরু, গাজী মো. সাখাওয়াত হোসাইন, কে জে এস বানু, জারা নামরীন, ড. তাওফিক আহমেদ চৌধুরী, রুসলান নাসির, কে এম তানজিব উল হক, খন্দকার আতিক-ই রাব্বানী, মাহরীন নাসির, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী জামান, রিয়াদ মাহমুদ চৌধুরী, এম খোরশেদ আনোয়ার, মাহমুদুন নবী চৌধুরী, এম খোরশেদ আলম, মহিউদ্দিন আহমদ, ইউনিট হেড মো. ওবাইদুল ইসলাম, মাহদিয়ার রহমান, মো. মাইনুল হাসান ফয়সাল, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং হেড মো. জাবেদুল আলম ও হেড অব কর্পোরেট বিজনেস সঞ্জয় দাশ।

এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে, ব্যাংকটির হেড অব প্ল্যানিং আশরাফ উজ জামান, চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মাসুদুল হক সরদার, হেড অব ট্রেড অপারেশন মো. মোকাদ্দাস, হেড অব ব্যাংকিং মো. জাহিদ হোসাইন, হেড অব বিজনেস সৈয়দ জুলকার নাইন, হেড অব ডিজিটাল ফিন্যান্স আহসান উল্ল্যাহ চৌধুরী, চিফ টেকনোলজি অফিসার জাহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. আবদুস সালাম, হেড অব কমিউনিকেশন জিয়াউল করিম, হিউম্যান রিসোর্সের প্রধান মনিরুল ইসলাম, হেড অব বিজনেস ইনফরমেশন মাসকুর রেজা, হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট মোস্তফা সরওয়ার, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, চান্দগাঁও শাখার ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম, নিজাম উদ্দিন, ওআর নিজাম রোড শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম মাইনুদ্দিন, কর্পোরেট এরিয়া হেড ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী এম এ কিউ সরওয়ার এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অডিট প্রধান মো. রেজাউল ইসলামকে।

মামলায় এজাহারে বাদী মো. মুর্তজা আলী উল্লেখ করেন, তিনি ভাইয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক। ২০১৭ সালে তিনি ইস্টার্ন ব্যাংকের ও আর নিজাম রোডের শাখায় পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়ী হিসেবে জমা করেন। কিন্তু ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর ৭ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংক সেটা দেয়নি। পরে ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ মুনাফাসহ ছয় কোটি ১০ লাখ টাকা দাঁড়ালে মুর্তুজা আলী সেটা ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় স্থানান্তর করেন।

২০১৭ ও ২০১৮ সালে মর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংকের চান্দগাঁও শাখায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি এফডিআর (স্থায়ী আমানত) খোলেন এবং তার বিপরীতে একটি ওএসডি (সিকিউরড ওভারড্রাফট) ঋণের জন্য আবেদন করেন। ২০১৯ সালে বিদেশে থাকার সময় তিনি ব্যাংকটির চান্দগাঁও শাখায় তার নামে দুটি জাল সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও চারটি জাল ঋণ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানতে পারেন। তার জাল স্বাক্ষর ও ভুল তথ্যে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৭ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে এবং পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মুর্তুজা আলী তার সকল পাওনা পরিশোধ করতে ইস্টার্ন ব্যাংক বরাবর লিখিত আইনি নোটিশ পাঠালেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মর্তুজা আলী ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে সব মিলিয়ে ১১ কোটি টাকা পাবেন বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হেলাল বিন মঞ্জুর তামিম বলেন, ‘ব্যবসায়ী মুর্তুজা আলীর সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টসহ এফডি (ফিক্সড ডিপোজিট) অ্যাকাউন্ট খোলেন। এফডিতে তিনি বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমা করেন। এ ছাড়া সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা ছিল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদসহ উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে বিভিন্ন নামে এবং ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলে। সেই অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করে বাদী বিদেশে থাকা অবস্থায় তারা এফডির বিপরীতে ঋণ নেয়। যা বাদী জানতেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এফডিআরের লাভসহ সর্বমোট ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তাই মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, মামলার বিষয়টি ২০১৭ সালে সংঘটিত একটি তহবিল আত্মসাতের ঘটনায় সম্পর্কিত, যা ব্যাংকের একটি শাখার প্রাক্তন কর্মকর্তা বহিরাগত প্রতারকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পরিচালনা করেছিলেন। এ ঘটনায় ব্যাংক অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং দোষী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরবর্তীতে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ডসহ আর্থিক জরিমানা করেন।

সম্প্রতি মামলা করে ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের অন্যায়ভাবে জড়ানো হয়েছে, যদিও তাদের সঙ্গে ২০১৭ সালের ঘটনার কোনও সম্পর্ক ছিল না। মামলাটি দায়েরকারী গ্রাহকের প্রতারকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ তৎকালীন সময়ে উত্থাপিত হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে, এই মামলাটি ব্যাংকের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার একটি অপচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ব্যাংক তার গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই বিষয়টিতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
গায়ক নোবেলের সঙ্গে ইডেনের সেই ছাত্রীর বিয়ের আদেশ
কেএনএফের ইউনিফর্ম তৈরি, গ্রেফতার ৮ জন রিমান্ডে
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
সর্বশেষ খবর
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ড. খলিলুর রহমানের সাক্ষাৎ
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ড. খলিলুর রহমানের সাক্ষাৎ
বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে ঝরনার পানিতে ভেসে গেছেন আরেক পর্যটক
বান্দরবানে ঘুরতে গিয়ে ঝরনার পানিতে ভেসে গেছেন আরেক পর্যটক
পল্টনে ‘মাদক কারবারিদের’ গুলিতে ডিবির দুই সদস্য আহত
পল্টনে ‘মাদক কারবারিদের’ গুলিতে ডিবির দুই সদস্য আহত
ইরানে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন: ব্লুমবার্গ নিউজ
ইরানে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন: ব্লুমবার্গ নিউজ
সর্বাধিক পঠিত
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
স্ত্রীর মামলায় কারাগারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়
‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য ভাঙা নিয়ে সমালোচনার ঝড়