গত বছর বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে গড়াই নদীর ভাঙনে শত শত একর ফসলি জমি ও হাজারো ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। এ অবস্থায় ভাঙন রোধে উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নে গড়াই নদীতে দেড় কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁশের বাঁধ। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, এ বাঁধের ফলে নদীর নাব্যতা বাড়বে এবং নদীভাঙন কমে আসবে। বাঁধ নির্মাণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
‘ব্যাম্বো বান্ডেলিং সারা বাংলাদেশ’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্পের অধিনে এ বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের বাস্তবায়নে বাঁধ নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। বাঁধটি গড়াই নদীর চারটি অংশে নির্মাণ করা হবে। যা হবে এক হাজার ৫০০ মিটার লম্বা। বাঁধ তৈরিতে খুশি স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদী শুকিয়ে গেছে, তাই চরেই চলছে বাঁশ পোতার কাজ। এক ফুট পরপর ২৫ ফুট লম্বা বাঁশ পোতা হচ্ছে। যার ১৩ ফুট থাকছে মাটির নিচে, আর ১২ ফুট ওপরে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাঁশ পোতা শেষে ১০ ফুট পরপর পোতা হবে মজবুত কাঠের গুড়ি। এতে তীব্র স্রোত মোকাবিলা করবে বাঁধ।
ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বাঁশের এই বাঁধ ভরা বর্ষায় নদীর নাব্যতা বড়াবে, গতিপথে পরিবর্তন আনবে এবং নদী শাসন করবে। এতে রাতে নদী তীরে আঘাত কমিয়ে আনবে। যা নদী ভাঙন কমাবে। এ বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাজের প্রায় ৩৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।’
এ কাজের শ্রমিক দলের প্রধান মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক হাজার বাঁশ দিয়ে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। লম্বা ও শক্ত বাঁশ এবং কাঠের মজবুত গুড়ি দিয়ে এটি তৈরি করা হচ্ছে। যা নদী ভাঙন রোধ করবে।’
নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, ‘ইউনিয়নের জামসাপুর গ্রামে গড়াই নদীতে বাঁশ দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হলে এলাকায় নদী ভাঙন রোধ হবে। এতে করে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. করিম বলেন, ‘এই বাঁধ যদি সত্যিই কাজে আসে, তাহলে সবার উপকার হবে। ভাঙন ঠেকানো গেলে এলাকার ফসলি জমি রক্ষা পাবে। সঙ্গে চরের জমি বাড়বে। কৃষক বেশি বেশি আবাদ করতে পারবে।’
গড়াই নদীতে বাঁশ দিয়ে বাঁধ তৈরির এই কাজের মেয়াদ এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত থাকলেও, আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার জোর প্রচেষ্টা চলছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।