করোনার সংক্রমণের মধ্যেও এ বছর হাওর ভ্রমণে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদুল ফিতরে প্রশাসনের কড়া নজরদাড়িতে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেননি করোনার প্রভাব ও লকডাউনের কারণে। তাই ঈদুল আজহায় যেন বাঁধ ভাঙা উল্লাসে মেতেছে হাওর প্রেমীরা। জেলার নিকলী বেড়িবাঁধ ও ছাতিরচর, তাড়াইলের হিজলজানী, করিমগঞ্জের বালিখলা, মরিচখালী ও চামটাবন্দর, ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওরে ঈদের দিন থেকেই মানুষজন ভ্রমণে মেতেছেন। তবে দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলছে না কেউ। হাওরে ঘুরতে আসা লোকজন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছেন না। বেশির ভাগ মানুষকেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।
ঈদের দিন বিকাল থেকে শুরু করে প্রতিদিনই বাড়ছে হাওরে মানুষের আনাগোনা। ভরা মৌসুমে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। জেলার প্রতিটি হাওর পয়েন্টে প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।
এবছর ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলাকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে অল ওয়েদার রোড (আবুরা সড়ক)। হাওর দর্শনে এ যেন নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনোমুগ্ধকর ছবি দেখে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে হাওর পাড়ে। আর দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতেও হিমশিম পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে। দর্শনার্থীদের সচেতন করতে প্রতিনিয়ত মাইকিং করা হচ্ছে। কারণ গত কয়েকদিনে হাওরের পানিতে ডুবে দর্শনার্থীসহ প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই।
হাওরে বেড়াতে আসা লোকজন জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা শহর থেকে হাওরে প্রতিটি পয়েন্টের যাত্রাপথ। অপ্রশস্ত রাস্তায় যানজট সঙ্গী হয়েছে পর্যটকদের। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টায়। তাই ঈদের পর থেকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন লোকজন।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া থেকে সাব্বির আহমেদ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে তারা জানান, আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। করোনা আমাদের কিছু করতে পারবে না। হাওর ঘুরে আনন্দ করতে এসেছি। আনন্দ করে আবার বাড়ি ফিরে যাবো।
নরসিংদী থেকে হাওর দেখতে বাইক নিয়ে ছুটে এসেছে ইফতেফার। তিনি জানান, হাওরের বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাই চার বন্ধু মিলে বাইক চালিয়ে হাওরে ঘুরতে আসা। কিন্তু খারাপ লাগছে বেশির ভাগ লোকজনই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেড়ানোর পাশাপাশি অন্তত সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। দর্শনার্থীদের স্বার্থে প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে নিকলীর হাওরে ঘুরতে এসেছেন রিফাত। তিনি এক প্রকার অভিযোগ করে বলেন, এত টাকা ব্যয় করে ঘুরতে এসে বিপাকে পড়েছি। নৌকা ভাড়া থেকে শুরু করে খাবারের প্রতিটি জিনিসেরই দাম দ্বিগুণ। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে দর্শনার্থীরা হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে হাওরে দর্শনার্থীদের সমাগম সীমিত করা হয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্রমণ করার বিষয়টিও নজরে আনা হয়েছে। দর্শনার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে খাবার বিক্রি করার বিষয়টি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিকে অবহিত করা হবে। এমনকি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিভিন্ন সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে।