X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ঘরে উঠতে চেয়েছিলেন রানা মিয়া

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
০৬ জুন ২০২২, ০০:০৫আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ০২:২৪

পানের দোকান চালানো বাবার বড় সন্তান রানা মিয়া। দেড় বছর যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে। নতুন বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে সাত দিনের ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। গত শুক্রবার (০২ জুন) সীতাকুণ্ডে কর্মস্থলে যোগ দেন। মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন আবার এসে নতুন ঘরে উঠবেন। কিন্তু চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই ফায়ার সার্ভিস কর্মী। অসহায় হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নবগ্রাম এলাকার ছেলে রানা মিয়া। তিনি কুমিরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহত রানার বোন জামাই ও বিজিবির সদস্য মো. রাসেল শেখ রবিবার রাত আটটার দিকে তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাসেল শেখ জানালেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে রানা মিয়ার মরদেহ বাড়ি আনার প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য জানলেও এখনও মৃত্যুর খবর জানেন না তার বাবা পান্নু মিয়া ও মা রেনোয়ারা বেগম।

নবগ্রাম গ্রামের পান দোকানদার পান্নু মিয়ার বড় সন্তান রানা মিয়া দেড় বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত। যোগদান পরবর্তী ট্রেনিং শেষে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর সীতাকুণ্ডে প্রথম যোগদান, আর সেখানেই দায়িত্ব পালনকালে প্রাণ হারালেন তিনি।

রানার প্রতিবেশি আওয়াল খান জানান, বাবা-মাসহ পরিবারের সঙ্গে সাত দিনের কাটিয়ে ছুটি সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২ জুন) রওনা দিয়ে শুক্রবার সকালে কর্মস্থলে পৌঁছান রানা মিয়া।

নিহতের মামা সুজন মিয়া জানান,  সবশেষ বৃহস্পতিবার রানার সঙ্গে দেখা হয় তার। পরিবারের দরিদ্রতা ঘুচাতে অনেক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিসে চাকুরি নেয় রানা। বাবা পান্নু মিয়া ঢাকায় পানের দোকান চালাতেন। এখনও নিজের ভিটায় ঘর তুলতে পারেনি রানা। মামার বাড়ি থেকে পাওয়া জমির উপর নতুন ঘড় তোলার যাবতীয় সরঞ্জাম আনা হলেও কাজ শুরু করতে পারেনি। এরই মধ্যে অগ্নিকাণ্ড রোধ করতে গিয়ে শেষমেষ নিজেই মৃত্যুর মিছিলে সামিল হয়েছেন।

সুজন মিয়া আরও বলেন, ‘মামার বাড়ী থেকে শেষ রাত যাপন করে কর্মস্থলে গেছে। যাওয়ার আগে বাবা পান্নু মিয়াকে বলে গেছে আবার ছুটিতে এসে নিজেদের নতুন ঘরে উঠবে। কিন্তু সে স্বপ্ন ধারন করে রানা এখন না ফেরার দেশে।’

সুজন মিয়া আরও জানালেন, নিহত রানা পরিবারে বড় সন্তান হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল। রানার ছোট ভাই সাজ্জাদ মিয়া স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছেন। আর তাদের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে।

সুজন মিয়া আরও জানান, রানার বাবা পান্নু মিয়া ঢাকায় পান দোকান চালাতেন। বেশ কিছুদিন আগে গ্রামে ফিরেছেন তিনি। পরিবারের খরচ চলতো রানার বেতনের টাকায়। রানাকে হারানোর শোকে কাতর হয়ে গেছে পুরো পরিবারসহ তাদের স্বজন ও গ্রামবাসী। আগামীর স্বপ্ন দুমরে মুচরে গেছে রানার পরিবারের।

শিবালয় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনির হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে গেছেন রানার মামা ইউসুফ আলী। এছাড়া শিবালয় মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আলাল উদ্দিনও একই কথা জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ফায়ার ফাইটার রানা মিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছেন।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো.শাহিন স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মজিবুর রহমানের উদ্ধৃতি দিয়ে এই মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

/জেজে/
সম্পর্কিত
বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ১ বছর, এখনও ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন সুলতান মাহমুদ
বিএম ডিপো বিস্ফোরণে নেই কারও দায়: ছেলের জন্য এখনও কাঁদেন স্কুলশিক্ষক বাবা
বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণমালিকপক্ষের অবহেলা পেয়েছে ৬ সংস্থা, কিছুই পায়নি ডিবি
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!