গাজীপুরে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় ও প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে (১৯) বিয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের এ ঘটনায় তরুণীর কথিত প্রেমিকসহ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই সময় গ্রেফতারদের ছিনিয়ে নিতে হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়। পরে গ্রেফতার প্রেমিকের বাবা-মাসহ অপর তিন জনকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়। বুধবার (৩০ নভেম্বর) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতাররা হলো গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর মরকুন কবরাস্থান এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে প্রেমিক আসাদুজ্জামান শাওন (২৮) ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বাবুল হোসেন বাবু (২৭)।
ধর্ষণের শিকার তরুণী জানান, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর পাগাড় এলাকার জৈমতখান রোডের মোসলেম উদ্দীনের বাড়িতে তারা ভাড়া থাকেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর মরকুন কবরস্থান এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে আসাদুজ্জামান শাওনের (২৮)। পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিয়ের কথা বলে তাকে টঙ্গীর মরকুনের বাসায় ডেকে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে শাওন। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাত একটার দিকে শাওন মোবাইলফোনে কল দিয়ে দেখা করতে বলে। রাতে না যেতে চাইলে অপর আসামি বাবুল হোসেন বাবু হুমকি দেয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে মরকুন কবরস্থান এলাকায় যান। সেখানে আসামি বাবুল হোসেন বাবু ও পলাতক আসামি রিপন মিয়া (৪০) তার মুখে গামছা গিয়ে চেপে ধরে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। সেখানে কথিত প্রেমিকসহ তিন জন তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে তার বর্ণনামতে স্থানীয়রা আসামি বাবুল হোসেন বাবুকে আটক করে এবং তারা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামি বাবুল হোসেন বাবুকে আটক করে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে বাবুল হোসেন বাবু (২৭) টঙ্গীর মরকুন এলাকায় ভাড়া থাকে। পরে ঘটনার সঙ্গে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মরকুন কবরস্থান এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে রিপন মিয়া (৪০) ও প্রেমিক শাওন জড়িত বলে জানায় সে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) ভোররাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাওনকে গ্রেফতার করে। দুপুরে গ্রেফতারদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে টঙ্গী পূর্ব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম জানান, ওই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা জানিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ এ কল করেন স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটক বাবুল হোসেন বাবুকে নিয়ে আসার সময় হামলা চালায় তার স্বজনেরা। এতে পুলিশের এক সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় আসামি আসাদুজ্জামান শাওনের পিতা লুৎফর রহমান কালু (৬০), তার স্ত্রী সনি আক্তার (৪০) ও ফাতেমা বেগমকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওসি আশরাফুল ইসলাম আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনায় তিন জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভিকটিম। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভিকটিমকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।