X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক গ্রামে বিক্রি হচ্ছে ২০ কোটি টাকার গোলাপ

নাদিম হোসেন, সাভার
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৩

ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রাণ ফিরেছে প্রকৃতিতে। বাজছে শীতের বিদায়ী ধ্বনি। ফাল্গুনের হিমেল হাওয়ায় আমের মুকুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ চারপাশ। গাছে গাছে কচি পাতা আর ফুলের সমারোহ। আনমনে ডাকছে কোকিল। বার্তা দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতির এই হাওয়া সবার হৃদয়ে দোলা দিয়েছে। কারণ বসন্তের সঙ্গে যোগ হয়েছে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মেলবন্ধনের দিন। অর্থাৎ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রিয়জনকে ফুল দিয়ে ভালোবাসা জানাতে এরই মধ্যে সব বয়সী মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। বেড়ে গেছে গোলাপের চাহিদা। 

সবার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপগ্রামের ফুল চাষিরা। একেকটি গোলাপ খুচরায় ৪০ এবং পাইকারিতে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ঘিরে প্রায় ২০ কোটি টাকার গোলাপ বিক্রির আশা তাদের।

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রাম, গ্রামজুড়ে গোলাপের বাগান

বিরুলিয়ার গোলাপ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করবে সবাই। এই দিনেই আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। এর এক সপ্তাহ পর ২১ ফেব্রুয়ারি। এসব দিবস ঘিরে টানা পরিশ্রম করছেন গোলাপ চাষিরা। বাগানজুড়ে এখন গোলাপের সমারোহ। বলা যায়, গোলাপের রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা দেড় হাজার চাষি। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রাম। গ্রামের যে দিকেই চোখ যায়, চোখে পড়ে একটার পর একটা ফুলের বাগান। এর মধ্যে বেশিরভাগই গোলাপ বাগান। এজন্য এটি গোলাপগ্রাম নামে পরিচিতি পায়। যদিও ইউনিয়নের শ্যামপুর, সাদুল্লাপুর, মোস্তাপাড়া, বাগ্নিবাড়ি, বাটুলিয়া ও কমলাপুর গ্রাম মিলে মূলত গোলাপগ্রামের নামকরণ হয়েছে। এই নাম দিয়েছেন দর্শনার্থীরাই। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে গোলাপ বাগান দেখতে আসেন হাজারো দর্শনার্থী।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিরুলিয়ার সাতটি গ্রামের ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই গোলাপ। এখানে মিরিন্ডা গোলাপ, চায়না গোলাপ ও ইরানি গোলাপ চাষ হয়। পাশাপাশি জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস ও চন্দ্রমল্লিকা চাষ করেন চাষিরা।

সবার চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাভারের বিরুলিয়ার গোলাপগ্রামের ফুল চাষিরা  

এসব ফুল চাষ করছেন বিরুলিয়ার প্রায় দেড় হাজার চাষি। এসব চাষির বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। গোলাপ বিক্রির জন্য শ্যামপুর ও মৈস্তাপাড়ায় গড়ে উঠেছে ফুলের বাজার। প্রতিদিন বাগান থেকে ফুল সংগ্রহ করে বিকালে এই দুই বাজারে নিয়ে যান চাষিরা। প্রতিদিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও পাইকাররা এসব ফুল কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নিয়ে যান।

গোলাপ চাষিরা জানিয়েছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশ যখন স্থবির তখন বিপাকে পড়েছিলেন তারা। এ সময় সমস্ত অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গাছে গাছে শুকিয়ে গেছে গোলাপ চাষিদের স্বপ্ন। টানা দুই থেকে আড়াই বছর ছত্রাক ও করোনার কারণে লোকসানে পড়েন। এবার চাষিরা প্রতিটি বাগান সর্বোচ্চ পরিচর্যা করেছেন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। চলতি মাসে প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানান চাষিরা।

সাদুল্লাপুর গ্রামের ফুল চাষি মো. সোলাইমান বলেন, ‘আমি ঋণ নিয়ে বাগান করেছি। গত দুই বছর ছত্রাক আর করোনার কারণে লোকসান দিয়েছি। অনেক কষ্ট করে এবার বাগান তৈরি করেছি। লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার আশায় দিনরাত পরিশ্রম করছি। সব গাছে ফুল ধরেছে। ফুল দেখলেই দুই বছরের কষ্টের কথা ভুলে যাই। আশা করছি, এবার ফুল বিক্রি করে সব ঋণ শোধ করতে পারবো।’ 

একেকটি গোলাপ খুচরায় ৪০ এবং পাইকারিতে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন চাষিরা

মোস্তাপাড়া গ্রামের চাষি আজিজুল হক বলেন, ‘এবার ভালো ফলন হয়েছে। তবে বাজারে আর্টিফিশিয়াল ফুলের কারণে আমরা ভয়ে আছি। যেকোনো সময় আমাদের ফুলের বাজারে ধস নামাতে পারে এই প্লাস্টিকের ফুল। আমরা সারা বছর কয়েকটি দিবসের অপেক্ষায় থাকি। এসব দিবসে মূলত আমরা লাভের মুখ দেখি। তবে প্লাস্টিকের ফুল ধীরে ধীরে বাজার দখল করছে। এসব ফুল আমদানি বন্ধ না হলে গোলাপ চাষ হুমকিতে পড়বে।’ 

সাদুল্লাপুর গ্রামের ফুল চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পুরো গ্রাম গোলাপ গ্রাম নামে পরিচিত করে দিয়েছেন সাংবাদিক ও ইউটিউবাররা। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবে বহুল প্রচারে আমাদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা বাগানে ঢুকে পড়ছেন, ছবি তুলছেন। এতে গোলাপের ডাল ভেঙে যাচ্ছে। গাছের গোড়ার মাটি শক্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাদের সারাদিন পাহারা দিতে হচ্ছে। দর্শনার্থীরা যদি এদিকে একটু খেয়াল রাখতেন, তাহলে আমাদের উপকার হতো।’

গ্রামের যে দিকেই চোখ যায়, চোখে পড়ে একটার পর একটা ফুলের বাগান

এদিকে, দেশের নানা স্থান থেকে ফুলের সৌন্দর্য আর প্রকৃতি দেখতে গোলাপ বাগানে ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। 

গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমি গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে গোলাপ বাগানে এসেছি। এতদিন শুধু ইউটিউব ও ফেসবুকে বাগান দেখেছি। আজ বাস্তবে দেখলাম, সত্যিই গোলাপ গ্রাম অনেক সুন্দর।’ 

নারায়ণগঞ্জ থেকে গোলাপ গ্রামে ঘুরতে আসা শহিদুল্লাহ বলেন, ‘গোলাপ গ্রাম মানুষের তৈরি হলেও প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা। বেশ কিছু গোলাপ কিনেছি ভালোবাসা দিবসের জন্য। এখানে গোলাপের দাম অনেক কম। ৩০-৪০ টাকা দরে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে। এখানে এলে যে কারও মন ভরে যাবে। তবে এখানে খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। খাবার হোটেল থাকলে দর্শনার্থীদের জন্য অনেক ভালো হতো।’

গ্রামের মধ্যে বেশিরভাগই গোলাপ বাগান

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ‘সবসময় বিরুলিয়ার ফুল চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছি আমরা। যাতে গত তিন বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারে, সেজন্য এবার ভালোভাবে বাগান পরিচর্যা করতে বলেছি চাষিদের। তাদের যত্ন অনুযায়ী ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন চাষিরা। অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক ভালো ফলন হয়েছে। একইসঙ্গে ফুলের ন্যায্যমূল্যের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলন অনুযায়ী প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি আমরা।’

মোস্তাপাড়া গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার পাইকারিতে ১৫-২০ টাকা পিস গোলাপ বিক্রি করেছি। খুচরায় ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে ভালোবাসা দিবসে প্রতি পিস আরও ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
চালক ও সহকারীর মৃত্যু যাত্রীদের মারধরে নয়, প্রতিযোগিতার কারণে: পুলিশ
বাড়তি ভাড়া চাওয়ায় যাত্রীদের মারধরে চালক-হেলপারের মৃত্যু
সাভার ৫ গাড়িতে আগুন: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া