মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গোলাগুলিতে সাত মাসের শিশুসহ ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বুধবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার আধারা ইউনিয়নের বকুলতলার সোলারচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সুরুজ মিয়া ও একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আহমদের লোকজনের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন—সোলারচর গ্রামের জুয়েল বেপারি (২২), তার চাচাতো বোন তাবাসসুম আক্তার (৭ মাস), অটোরিকশাচালক জহিরুল ইসলাম (৩১), বকুলতলা এলাকার জয় মাস্তান (২৫), একই এলাকার মো. আলভী (১৭) ও মো. রাসেল (২৩)। এর মধ্যে আলভী ও রাসেলকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বাকি চার জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সুরুজ মিয়ার সঙ্গে আলী আহমদের বিরোধ চলছিল। বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়ান। একপর্যায়ে একপক্ষ অপরপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। ওই সময়ে বিয়ের বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন জুয়েল বেপারি, তার চাচাতো বোন তাবাসসুম ও তাদের বহনকারী অটোরিকশাচালক জহিরুল। সেইসঙ্গে দুই পক্ষের আরও তিন জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জুয়েল, তাবাসসুম, জহিরুল ও জয় মাস্তানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। বাকি দুই জনকে চিকিৎসা দেওয়ার পর আটক করেছে পুলিশ।
গুলিবিদ্ধ জুয়েল বেপারি বলেন, ‘আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে। বুধবার বিকালে সদরে বিয়ের বাজার করে বাড়ি ফিরছিলাম। বকুলতলা এলাকায় গোলাগুলির সময়ে মাঝখানে পড়ে যাই আমরা। এতে আমি এবং আমার সঙ্গে থাকা চাচাতো বোন তাবাসসুম ও অটোরিকশাচালক জহিরুল গুলিবিদ্ধ হই।’
ছয় জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে জানালেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এস এম ফেরদৌস হাসান। তিনি বলেন, ‘শিশুসহ গুলিবিদ্ধ চার জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আরও দুই জনকে চিকিৎসা দেওয়ার পর আটক করেছে পুলিশ।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুরুজ মিয়া বলেন, ‘মুন্সীরহাট বাজার থেকে বকুলতলায় ফেরার পথে আমাকে গুলি করেছে প্রতিপক্ষ আলী আহমদের লোকজন। আমি কোনও রকমে বেঁচে এসেছি। ওখানে আমার সমর্থকরা গোলাগুলিতে জড়িত ছিল না। যারা ছিল তারা সবাই আলী আহমদের ছেলে ও তাদের লোকজন।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আলী আহমদ বলেন, ‘আমি এলাকায় নেই। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় আছি। খবর নিয়ে জেনেছি, অটোরিকশা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আমার ছোট ছেলে জনিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে সুরুজ মিয়া ও তার লোকজন। সেই গুলি কয়েকজনের শরীরে লেগেছে।’
সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষের লোকজন পালিয়ে যায়। সংঘর্ষের সময় ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে শুনেছি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। এখনও দুই পক্ষের কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’