গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠানের বিরিয়ানি খেয়ে ১৯১ শিশু-কিশোর অসুস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ১৮২ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং নয় জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের চার্চ অব বাংলাদেশ আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিরিয়ানি খেয়ে তারা অসুস্থ হয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন চার্চের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রিপন কুন্দা।
মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কুমার মৃদুল দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১৮২ শিশু-কিশোরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে বলে ধারণা করছি আমরা।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টা থেকে কান্দি ইউনিয়নের চার্চ অব বাংলাদেশ সংস্থাটির তালিকাভুক্ত ৩২০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। এসব শিশু-কিশোরকে বিকাল ৩টার দিকে বিরিয়ানির প্যাকেট দেওয়া হয়। বাড়িতে নিয়ে খাওয়ার পর সন্ধ্যায় বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয় তাদের। সন্ধ্যার পর থেকে অভিভাবকরা তাদের শিশু-কিশোরদের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সেখানে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১৮২ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নয় জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা সুস্থ আছে।
ধারাবাশাইল গ্রামের বিপুল রায়ের স্ত্রী সাথী রায় বলেন, ‘আমার চার মেয়ে সকালে চার্চের অনুষ্ঠানে যায়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তারা বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে বাড়িতে আসে। সন্ধ্যায় ওই খাবার খাওয়ার পরপরই বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এরপর তাদের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসি। রাতে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন সবাই সুস্থ আছে।’
কান্দি চার্চের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রিপন কুন্দা বলেন, ‘আমাদের সংস্থার তালিকাভুক্ত ৩২০ শিশু-কিশোরকে নিয়ে প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠান করা হয়। স্থানীয় ধারাবাশাইল বাজারের গোবিন্দ বোস হোটেল থেকে তাদের জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়েছিল। ওই বিরিয়ানি খেয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিশু-কিশোর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’
খাবারের ব্যাপারে জানার জন্য ধারাবাশাইল বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী গোবিন্দ বোসের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কুমার মৃদুল দাস বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বমি ও পাতলা পায়খানাজনিত সমস্যা নিয়ে আসা ১৮২ শিশু-কিশোরকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এখনও কয়েকজন শিশু-কিশোর চিকিৎসাধীন আছে। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এখনও চার জন ভর্তি আছে। বাকি পাঁচ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছে।’
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে শিশু-কিশোরদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে সবাই সুস্থ আছে। যারা এখনও ভর্তি আছে তাদেরও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে কী কারণে তারা অসুস্থ হয়েছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দোকানের বিরিয়ানিতে কোনও ঝামেলা ছিল কিনা, কিংবা কারও কোনও গাফিলতি আছে কিনা, তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’