গাজীপুরের শ্রীপুর থানা 'পুলিশের অবহেলায়' ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পাঁচ দিন বয়সী এক নবজাতককে দাফন করতে পারেনি তার পরিবার। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত লাশ দাফন করতে পারেননি স্বজনরা।
নবজাতকের বাবা মাজাহারুল ইসলাম ও মা মীম আক্তার এ অভিযোগ করেছেন। তারা শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের বাসিন্দা। এটি তাদের দ্বিতীয় ছেলেসন্তান।
মাজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২৯ জানুয়ারি দুপুর ২টায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একই গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে রফিক, তার স্ত্রী আফরোজা, তাদের ছেলে আরিফ এবং রফিকের মামাসহ পাঁচ জন তার বাড়ির উঠানে এসে মারধর করলে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মীম আহত হন। স্বজনরা তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন রাতেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সুরুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে রফিকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে উল্টো গৃহবধূর স্বজনদের শাসিয়ে যান। ওই দিকে গৃহবধূর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, গৃহবধূর অবস্থা ভালো না। সিজারিয়ান অপারেশন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, ৭ ফেব্রুয়ারি অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম হয়। অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে লাশ নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ নবজাতকের মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। খবর পেয়ে বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে এসআই সুরুজ্জামান গৃহবধূর স্বামীকে লাশ নিয়ে থানায় আসতে বলেন।
মীম আক্তার বলেন, ঘটনার দিন বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে দা, লাঠি, লোহার রড দিয়ে মারতে থাকলে বাধা দেওয়ায় রফিক আমার তলপেটে লাথি মারে। এ সময় আমি অচেতন হয়ে পড়ে যাই। রফিক ও তার স্বজনদের মারধরের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সিজার করতে হলো। সিজারের পর রক্ত শূন্যতার কারণে আমি দুদিন কানে শুনতে পাইনি। একটা মায়ের কাছ থেকে একটা শিশু চলে যাওয়া যে কত কষ্টের, তা মা ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না। এরপর পুলিশ বলেছে নবজাতকের লাশ নিয়ে থানায় আসার জন্য। আমরা লাশ নিয়ে থানায় যাই। লাশ রাতের বেলায় মর্গে রাখা যাবে না বলে জানায় পুলিশ। আমাদেরকে লাশ নিয়ে থানায় অবস্থান করতে বলে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে লাশ নিয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে পুলিশ।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রফিক বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। আমরা গৃহবধূর পেটে লাথি দিইনি। উল্টো তারা আমাকে মারধর করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সুরুজ্জামান বলেন, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গৃহবধূর স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা সঠিক নয়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্তদের কাছ থেকে এসআইয়ের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। নবজাতকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের পর দাফনের অনুমতি দেওয়া হবে।