গাজীপুরে ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন ও শ্রমিকদের ওপর হামলা, নারী শ্রমিকদেরকে নির্যাতন এবং কারখানার মালিকসহ তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে লাকড়ি ও আবর্জনায় আগুন দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। অবরোধে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মহানগরীর বাসন থানার কড্ডা নান্দুন (কড্ডা বাজার) এলাকার কেমিও ইউএসএ নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এসব দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাদেরকে পূর্ববর্তী মাসের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা রয়েছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসেই তাদের বেতন নিয়ে টালবাহানা করে। কোনও মাসেই সঠিক সময়ে বেতন দিতে পারে না। সোমবার ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার কথা ছিল। ওই দিন সকাল ৭টায় কারখানায় প্রবেশ করে শান্তিপূর্ণভাবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কাজ ডিউটি করেন। পরে তিনটার মধ্যে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও না দিয়ে কারখানার সকল কর্মকর্তা পালিয়ে যায়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা দাবি করেন, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বাইরে থেকে মালিকের পালিত ক্যাডার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্য লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে এসে শ্রমিকদের মারধর করে। তাদের মারধরে ৫-৭ জন শ্রমিক আহত হয়। এ সময় হামলাকারীরা অনেক নারী শ্রমিককে নির্যাতন করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এদিকে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ৭টায় শ্রমিকরা কাজ করার জন্য কারখানায় প্রবেশ করে উৎপাদন ফ্লোরে গিয়ে নিজ নিজ মেশিনে শান্তিপূর্ণভাবে বসে থাকে। তবে তারা কাজ না করে ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করে। একপর্যায়ে মালিকের বহিরাগত ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন এবং পুরুষ শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। পরে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার বাইরে এসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা মহাসড়কে লাকড়ি ও আবর্জনা রেখে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সড়কের উভয়পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শ্রমিকেরা দাবি করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মালিকসহ কারখানা কর্তৃপক্ষ এসে তাদের দাবি না মানবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মহাসড়ক থেকে সরবেন না। বহিরাগত যেসব ক্যাডার নারী শ্রমিকদের নির্যাতন করছে এবং পুরুষ শ্রমিকদেরকে মারধর করছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার আহমেদ বলেন, ‘বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে জিএমপি, শিল্পপুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, জেলার কালিয়াকৈরে এক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদ ও পোশাক কারখানা খোলার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় অবস্থান নেন। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন কারখানার গেটে গেলে তাদের আন্দোলনে আশপাশের সাদমা, কোকোলা, মন্ট্রিমস, লিভাসসহ ১৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে দিয়ে পাশেই অবস্থান নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল সেলিম জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন স্থানে থানা-পুলিশের পাশাপাশি শিল্পপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুরের জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশন ইনচার্জ আব্দুস সামাদ জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা। ভোগড়া ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে যাওয়ায় চেষ্টা করছে।