ফরিদপুরে হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করেও আলু রাখতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। এতে আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হিমাগারের সামনে অপেক্ষারত ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
ফরিদপুর শহরতলির রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে হিমাগার ফটকের সামনে ও আশপাশের সড়কে পাঁচ-ছয় দিন ধরে অপেক্ষা করেও আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। শঙ্কা প্রকাশ করছেন দীর্ঘ সময়ে প্রচণ্ড গরমে নষ্ট হতে পারে ট্রাকে রাখা আলু।
নিয়ম অনুযায়ী হিমাগারে আলু রাখার জন্য প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বুকিং দিতে হয়। তবে এবার বুকিং দিয়েও আলু রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ফরিদপুর হিমাগারে আলু রাখার জন্য ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছে সেলিম মোল্লা। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ দিন আগে ১৩ টন আলু নিয়ে ফরিদপুর এসেছি। অপেক্ষা করতে করতে এখন ক্লান্ত। ভয় পাচ্ছি ট্রাকে রাখা আলু প্রচণ্ড গরমে পচন না ধরে।’
হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, যানবাহন ভরে আলু নিয়ে এসে দীর্ঘ লাইন ধরে কেউ কেউ তিন দিন আবার কেউ পাঁচ দিন ধরে হিমাগারের ফটক থেকে বাইরের রাস্তায় অপেক্ষা করছেন। আগতদের অধিকাংশ উত্তরবঙ্গ জেলাগুলে থেকে আসা।
ফরিদপুর হিমাগারে ম্যানেজার রুস্তম মোল্লা জানান, ফরিদপুর সদর উপজেলার গোয়ালচামট এলাকায় ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফরিদপুর হিমাগার লিমিটেড। ব্যবসায়ী ও কৃষকরা মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে আলু সংরক্ষণ করেন। এ ছাড়া ফল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই অল্প দিনের জন্য বিভিন্ন ফল সংরক্ষণ করে রাখেন। সুবিধামতো সময়ে আবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু ও ফল বিক্রির জন্য নিয়ে যান।
এই হিমাগারটির ধারণক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার বস্তা। প্রতিবস্তায় ৬০ কেজি করে আলু রাখতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৪০৫ টাকা হারে ভাড়া প্রদান করেন।
মৌসুমের শুরুতে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, দিনাজপুর, ও রাজশাহী অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আলু এনে এই হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখেন।
হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিক ফলন ও একই সঙ্গে সবাই আলু নিয়ে আসার কারণে এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি বস্তা আলু হিমাগারে প্রবেশ করানো হয়েছে। এখন অপেক্ষমাণ যারা রয়েছে তাদেরটুকু নিতে পারলেই হয়।
অপেক্ষায় বিড়ম্বনা কথা স্বীকার করে রুস্তম মোল্লা বলেন, ‘আমাদের আনলোডের শ্রমিকসংখ্যা কম। যে কারণে দূরদূরান্ত থেকে আসার ট্রাকগুলো থেকে আমরা পর্যাপ্ত আলু আনলোড করতে পারছি না। তবে আশা করছি আগামী চার পাঁচ দিনের মধ্যে যে ট্রাকগুলো অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করতে পারবো।’
হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে আসা লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ তিন দিন, কেউবা পাঁচ দিন ধরে ট্রাক্টর, ভটভটি, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আলু নিয়ে এসেছেন হিমাগারে রাখার জন্য। এখনো রাস্তার বাইরে আলু নিয়ে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন তারা।